সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আম্পায়ার নিরপেক্ষ না হলে খেলা হয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

আম্পায়ার নিরপেক্ষ না হলে খেলা হয়?

ড. কামাল হোসেন

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলছেন, প্রভাব ও হস্তক্ষেপ মুক্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আম্পায়ার যদি নিরপেক্ষ না হয় ক্রিকেট খেলা নিরপেক্ষ হবে না। তেমনি নিরপেক্ষ ইসি ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল বিকাল সোয়া ৫টায় বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে গণফোরাম গতকাল ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বিকাল পৌনে ৪টা থেকে প্রায় ৫টা পর্যন্ত বৈঠকে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন ও আইনের বিধিবিধান প্রণয়ন, নির্বাহী বিভাগের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ মুক্ত স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় গণফোরামের পক্ষ থেকে ৯ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবে আইনের জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ এবং এ জন্য যোগ্যতার অগ্রাধিকার যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি অনুসদ্ধান কমিটি গঠন এবং অনুসন্ধান কমিটির নিরপেক্ষতার জন্য প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে কমিটির সভাপতি করার প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া কমিটিতে জাতির আস্থাভাজন একজন শিক্ষাবিদ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, নারী প্রতিনিধি ও সাংবাদিক প্রতিনিধি রাখারও প্রস্তাব করে গণফোরাম। একই সঙ্গে ইসিকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ জন্য জাতীয় বাজেটেও ইসির জন্য পৃথক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। নব্বইয়ের ২৩ দফা থেকে সরে এসে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়েছে বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। এ জন্য সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে মুক্ত রাখতে হবে।’ ‘কমিশন গঠনের লক্ষ্যে এই আইন বর্তমান সংসদে হতে পারে অথবা রাষ্ট্রপতি চাইলে অধ্যাদেশ জারি করেও করতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি একজন অভিজ্ঞ মানুষ। তিনি নিজেই দেশের নির্বাচনী ইতিহাস জানেন। তাই তাকে অনুরোধ করেছি, একটি শক্তিশালী ইসি গঠন করুন দেশের জন্য।’ গণফোরামের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। এ ছাড়া নির্বাচনী বিধি প্রণয়ন, বাস্তবায়নের পূর্ণক্ষমতা ইসির ওপরই থাকবে।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব খেলাফত আন্দোলনের : এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে খেলাফত আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠকে অংশ নেন আন্দোলনের চেয়ারম্যান মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদেরও এ কথা জানান দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, ‘আমরা মনে করি, গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা প্রয়োজন।’

 

রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া খেলাফতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসি গঠনের আগে সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। তবে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ইসি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন ছাড়া ১৪-দলীয় জোটের প্রস্তাব থেকে একজন, ২০-দলীয় জোটের প্রস্তাবিত একজন, ইসলামী দল ও আলেমদের থেকে একজন প্রতিনিধি নেওয়ার দাবি জানান তারা। এ ছাড়া ধর্মবিদ্বেষী, দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিককে যেন নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ না দেওয়া হয় সে দাবিও জানানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিগত দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর পদক্ষেপ ও বহু অর্থ ব্যয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করায় দেশে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হয়েছে।

গণতন্ত্রী পার্টির ৮ দফা : এর আগে বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন ব্যারিস্টার আরশাদ আলীর নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি। এ সময় রাষ্ট্রপতির কাছে তারা আট দফা প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিকল্প নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন। এ কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সফল ব্যক্তিদের নিয়ে গঠনের প্রস্তাব করা হয় এবং তাদের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত বা সে পরিবারের সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে—আইন করে তা নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাহাদত হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. কহিমুল্লাহ, নূরুর রহমান সেলিম, সরাফত আলী হিরু প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর