রাজধানীসংলগ্ন টঙ্গীর কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ নদের তীরে আজ তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। পবিত্র হজের পর মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় মহাসমাবেশ এটি। দুপুরে এ ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার বিকালে জামাতবদ্ধ হয়ে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ শুরু করেন।
মুসল্লিদের যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় সেদিক বিবেচনা করে এবার দেশের ৬৪ জেলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ বছর নির্দিষ্ট ৩২ জেলার মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রথম পর্বে ১৬ এবং দ্বিতীয় পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করবেন। তবে ঢাকা জেলার মুসল্লিরা দুই পর্বেই অংশ নেবেন। সারা দেশের জামাতবদ্ধ মুসল্লিদের জেলাওয়ারি খিত্তায় বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম দফায় পুরো মাঠকে ২৭ আর দ্বিতীয় দফায় ২৬ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এবারের ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদেশি আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কিরামরা ৬ উসুল যথা ইমান, নামাজ, ইলম ও জিকির, একরামুন মুসলিমিন, তাসহিহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলিগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বয়ান রাখবেন। মূল বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হবে।
ইজতেমায় ৩ ব্যক্তির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ইজতেমার মুরব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন জানান। এরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের খেজুরডাঙ্গা এলাকার আবদুস সাত্তার (৬০), ময়মনসিংহের নান্দাইলের মারুয়া গ্রামের মো. ফজলুল হক (৫৬) ও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার নিজবন্নী এলাকায় মো. জানু ফকির (৭০)।২৪টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস : টঙ্গী রেলওয়ে মাস্টার হালিমুজ্জামান জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য ২৪টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজ বাদ জুমা ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-ঢাকা ও ১৪ জানুয়ারি লাকসাম-টঙ্গী বিশেষ ট্রেন চলবে। ১৫ জানুয়ারি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে দাঁড়াবে। এ লাইনে ১৫ জানুয়ারি ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
চিকিৎসাসেবা : টঙ্গী হাসপাতালের আরএমও ডা. পারভেজ হোসেন জানান, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ‘গাজীপুর সিভিল সার্জন টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল’কে ইজতেমার জন্য অস্থায়ীভাবে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষ, হৃদরোগ ইউনিট, বক্ষব্যাধি/অ্যাজমা ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্ন ইউনিট, স্যানিটেশন টিম ও ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চক্ষু, মেডিসিন, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
বিদ্যুৎ সরবরাহ : ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। এ ছাড়া স্ব স্ব স্থানে ৪টি সাব স্টেশন ও ৫টি ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে।
পানি সরবরাহ : ওয়াসার ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা ময়দানে ১২টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে যা থেকে দৈনিক প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি মুসল্লিদের সরবরাহ করা হবে। এবারও নতুন করে ২ হাজার ৪৯৬টিসহ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার স্থায়ী টয়লেট, গোসল ও ওজুখানা তৈরি এবং মেরামত করা হয়েছে।
বিশেষ পরীক্ষণ যন্ত্র : ইজতেমা ময়দানে বিদেশি নিবাসের ৩টি রাস্তায় একটি করে আর্চওয়ে নামের বিশেষ পরীক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে; যার ভিতর দিয়ে কেউ কোনো ধরনের বিস্ফোরক নিয়ে প্রবেশ করলে বিশেষ সিগন্যাল প্রদান করবে।
ইজতেমা কমিটির বক্তব্য : বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে তুরাগতীরে ১৬০ একর বিস্তৃত জায়গা মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে স্ব স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। আজ শুরু হয়ে আগামী রবিবার দুপুরের আগে যে কোনো সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে।