বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগে আস্থা ফিরেছে মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগে আস্থা ফিরেছে মানুষের

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, অপরাধী যত বড় হোক না কেন, সে দায়মুক্তি পাবে না। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রভাবশালী আসামি র‌্যাবের কতিপয় কর্মকর্তা রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, যা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ওই মামলার বিচার নিষ্পত্তি করায় বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে। দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে গতকাল প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গরিব-অসহায়, হতদরিদ্র বিচার প্রার্থীসহ আপামর বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার সেবা প্রদানে সব স্তরের বিচারকরা আরও বেশি সংবেদনশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমশ বাড়বে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এশিয়ার একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতার ওপর একটি দেশের সভ্যতার চরিত্র পরস্ফুিট হয়ে ওঠে। অন্যকথায় বলা যায়, কোনো দেশের সরকারের কৃতিত্ব পরিমাপ করার সর্বোত্তম মাপকাঠি হচ্ছে বিচার বিভাগের দক্ষতা ও যোগ্যতা। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য নীতির প্রতিফলন হচ্ছে সংবিধানের মূল চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিচার বিভাগ এর সীমার বাইরে গিয়ে অন্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তেমনিভাবে আমিও প্রত্যাশা করি, রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি উল্লেখ করেন, মামলা ব্যবস্থাপনায় সংস্কার ও দ্রুত সেবাদানের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সফটওয়্যারের সহায়তায় কোনো মামলার তথ্য এখন সার্চ কমান্ড দিয়ে বের করা সম্ভব। তথ্য প্রযুক্তির সর্বশেষ সুবিধাগুলো ব্যবহার করে সব নাগরিকের কাছে তাদের পছন্দের ডিভাইসে মামলার তথ্য পাঠানোর কাজটিও নিশ্চিত করা কঠিন কাজ হবে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের কোর্ট ও চেম্বার সংকট রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের কোনো প্রশাসনিক ভবন নেই। সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শিশুদের পরিচর্যার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ডে কেয়ার সেন্টার ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মেডিকেল সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তীব্র সংকট রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তায় ৬২৫ জন জনবল বিশিষ্ট ‘সুপ্রিম কোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ গঠিত হয়েছে। কিন্তু ব্যাটালিয়নের জন্য কোনো স্থান সংকুলান নেই। ফলে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে ৩০ লক্ষাধিক মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের তুলনায় কর্মশক্তি খুবই অপ্রতুল। এটা খুবই স্পষ্ট যে, দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। তা সত্ত্বেও ঝুলে থাকা মামলাগুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। সাংবাদিকতাকে মহান পেশা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিকরা। ফলে বিচার বিভাগ ও সাংবাদিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক অত্যাবশ্যক। মিডিয়া বিচার বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সময়োপযোগী সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নিরন্তর সহযোগিতা করছে।

সর্বশেষ খবর