বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগের পুনর্মিলনীতে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী জনমত সৃষ্টি এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। মাদকাসক্তি ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেহেতু ছাত্রলীগের নীতি হচ্ছে শিক্ষা শান্তি প্রগতি, তাই শিক্ষার আলো জ্বেলে প্রগতির পথ বেয়ে শান্তির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। এটা যেন থেমে না যায়। তার জন্য ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে নিজেদের তৈরি করতে হবে। বেলুন উড়িয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত হয়। এ সময় শেখ হাসিনাও গানে কণ্ঠ মেলান। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন। সংগঠনের সহ-সভাপতি নিশিতা ইকবাল নদী ও চৈতালি হালদার চৈতী শেখ হাসিনাকে উত্তরীয় ও ব্যাজ পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভামঞ্চে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসমত কাদির গামা, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীর, আবদুল মান্নান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শাহে আলম, অসীম কুমার উকিল, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইকবালুর রহিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ইসহাক আলী খান পান্না, বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন ও বদিউজ্জামান সোহাগ। বিকাল ৩টায় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগের মিছিলের সে াত নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দুপুর ১টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সব আসন।  ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পেয়ে বর্তমান নেতারা সেলফি তুলতে মেতে ওঠেন। অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন সেই অতীতের আন্দোলন সংগ্রামের দিনগুলোর কথা। অনুষ্ঠানে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া অন্য কোনো দিন শোভাযাত্রা না করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ অন্ধকার থেকে এখন আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। দেশ আজ সব দিক থেকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

 বিশ্বসভায় আজ বাংলাদেশের যে মর্যাদা তা সমুন্নত রাখতে হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে যদি আমরা পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারি, তবে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে পারব না কেন? আমরাই পারব দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধশালী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে।

ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। আদর্শ ও নীতি নিয়ে দেশকে কিছু দিতে পারাই সবচেয়ে বড় সম্পদ। একমাত্র শিক্ষাই পারে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। আর ছাত্রলীগের নীতিই হচ্ছে- শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। এটা মনে রেখেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। আমি নিজের ছেলে-মেয়েদেরও একটাই সম্পদ দিয়েছি। তা হলো শিক্ষা। শিক্ষাকে কেউ কোনো দিন কেড়ে নিতে পারবে না। শিক্ষা থাকলে সেটাই হবে চলার পাথেয়। অশিক্ষিতের হাতে দেশ পড়লে কী দুরবস্থা হয়, ’৭৫ সালের পর থেকে দেশের মানুষ তা দেখেছে।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ হওয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা কীভাবে একটা ভালো ও অর্থশালী পরিবারের সন্তান হয়ে জঙ্গিবাদের পথে যেতে পারে! কীসের আশায়! জঙ্গিবাদের পথে গেলেই বেহেশতে যাবে? যারা গেছে তারা কি তাদের খবর পাঠিয়েছে যে তারা বেহেশতে গেছে! সেই খবর তো কেউ দিতে পারেনি। তাই এদের যারা বিভ্রান্ত করছে, তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, খালেদা জিয়া যখন হুমকি দিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ছাত্রদলই যথেষ্ট, আমি তখন ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি তা সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা পারব এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে আছে। বাংলাদেশ নিম্নে থাকবে না, ঊর্ধ্বে উঠবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশ করতে পারব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি শান্তির বাংলাদেশ। সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট। অর্থাৎ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।  আমাদের এই সুযোগ আছে। এ সময় তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি আর মাত্র ১০টি বছর বেঁচে থাকতেন, তবে বাংলাদেশ আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত।

সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ এই দেশের প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাত্রলীগের কত কর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন এই কথা মনে রাখতে হবে। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। কেননা ছাত্রলীগের ইতিহাসই হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস। সেই ঐতিহ্য সামনে নিয়ে ছাত্রলীগকে গড়ে তুলে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে— এটাই আমি চাই।

সর্বশেষ খবর