রাষ্ট্রপতি ভবনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ গেছে আগেই। তবুও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিজে ফোন করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। সূত্র জানায়, ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে দেওয়া প্রণবের নৈশভোজে হাজির থাকতে মমতাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন প্রণব।
শেখ হাসিনার সফরের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল নয়াদিল্লি এসেছেন। একটি সম্মেলনে (দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমন্বয় সংক্রান্ত) যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় আর্থিক চুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে কেন্দ্রের উত্কণ্ঠা এখন সবচেয়ে বেশি হাসিনা দিল্লি থাকাকালীন মমতার আসা না-আসা নিয়ে। কূটনৈতিক কর্তারা মনে করছেন, মমতা-হাসিনার মুখোমুখি বৈঠক হলে তিস্তা নিয়ে বরফ গলার কাজটা শুরু হতে পারে। সরকারি সূত্রের খবর, হাসিনার সফরের সময় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী পাঁচ ভারতীয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজে (যেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও) একমাত্র মমতাকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রণববাবুও অন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেননি। তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা নিজে এখন পর্যন্ত দিল্লি আসার ব্যাপারে পাকা কথা দেননি প্রণবকে। কিন্তু না-ও বলেননি। শুধু বলেছেন, এ ব্যাপারে পরে জানাবেন। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, রাষ্ট্রপতি নিজে টেলিফোন করার পর মমতার পক্ষে না আসাটা কঠিন হয়ে পড়বে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মনমোহন সিংহের সরকার ত্রিপুরার কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং মমতা ব্যানার্জিকে একই সঙ্গে নিমন্ত্রণ করেছিল ঢাকা সফরের জন্য। মমতা সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন ঢাকা যাত্রার কয়েক দিন আগে। দিল্লির রাজনৈতিক মহল জানাচ্ছে, হাসিনার সফরে তিস্তা চুক্তি সই না হোক, কিছুটা অগ্রগতির জন্য মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতি এতটা কাম্য। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মোদি-হাসিনার আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সংস্কার এবং উন্নয়ন নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। শুষ্ক মৌসুমে যাতে বাংলাদেশে পানির সমস্যা না হয়, সে কারণে ভারতকে বর্ষার পানি ধরে রাখতে রিজার্ভার গড়ার প্রস্তাব দেবে ঢাকা। এ ব্যাপারে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতেও রাখা হতে পারে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিতে ১৬৬১ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ দিয়েছিলেন। সে জন্য তাদের নিকটাত্মীয়দের হাতে সম্মাননা অর্পণের কাজটি হাসিনার সফরেই শুরু করা হবে। ৮ এপ্রিল নয়াদিল্লির মানেকশ সেন্টারে এ তালিকার প্রথম ৭ জন সেনার পরিবারের হাতে মানপত্র, রৌপ্য মেডেল এবং ৫ লাখ টাকার (ভারতীয়) চেক তুলে দেবেন হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য, তথ্য ও সম্প্রচার সংক্রান্ত যে চুক্তিগুলো সই হবে তা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে গঙ্গা অববাহিকার সংস্কার নিয়েও। সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ভারতের হিরো মোটোকর্পের কারখানা খোলা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হবে। যৌথ উৎপাদনে তৈরি বাইক অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হবে। পাশাপাশি ভুটানে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করার ব্যাপারেও চুক্তি সই হবে। শেখ হাসিনা ভারত সফরের পর ১৯ এপ্রিল ভুটানে যাবেন।