মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

চিকুনগুনিয়া জ্বরে কাঁপছে ঢাকা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

চিকুনগুনিয়া জ্বরে কাঁপছে ঢাকা

রাজধানীতে ঘরে ঘরে ‘মহামারী’ আকারে দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়া। মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ানো এ জ্বর প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ছাড়া মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের তত্পরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

‘চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ’ বিষয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘যে দেশ জঙ্গি দমন করতে পারে, তারা মশা নিধন করতে পারবে না, তা হতে পারে না। আমরা জঙ্গি দমন করতে সফল হয়েছি। এই রোগবাহী মশা নিধন করতেও সফল হব।’ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সারা দেশে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার (চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণকক্ষ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। জনসাধারণের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সার্বক্ষণিক হটলাইন চালু করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত তথ্য জানতে ও জানাতে ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের পাঁচ শতাধিক ডাক্তার, নার্সকে চিকুনগুনিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইমামদের মাধ্যমে অবহিতকরণ ও সচেতনতামূলক সভা পরিচালনা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম এম সালেহ ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মশা নিধনে বাড়তি উদ্যোগ হিসেবে আমরা ৩-১৬ জুলাই পর্যন্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। এ ছাড়া মশার আক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা এলাকাগুলোয় বার বার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘গত তিন মাসে ৬৪৩ ব্যক্তির রক্ত ও লালার নমুনা পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে ৫১৩ জন চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। দেশে একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানেই চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করার প্রযুক্তি আছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা জানার জন্য আমরা জরিপ শুরু করেছি। এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রভাব থাকবে।’ তবে ঈদে বাড়ি যাওয়ার কারণে সারা দেশে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানান তিনি। চিকুনগুনিয়া থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রওশন আলী। তিনি বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া ভাইরাসবাহী মশা এডিসের মাধ্যমে ছড়ায়। উচ্চমাত্রার জ্বরের সঙ্গে শরীরের সংযোগস্থলগুলোয় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এর কোনো টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধ করতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এর জন্য প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন ‘সি’ আছে এমন ফলমূল খেতে পারেন।’আইইডিসিআরের গবেষকরা জানান, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়ার ব্যাপক প্রকোপ দেখা দেয়। তখন এক দফা সমীক্ষা চালানো হলেও বাংলাদেশে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর দেখা মেলে। ২০১১ সালে আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকার দোহারে এর প্রকোপ দেখা দেয়।

বগুড়ায় ঘরে ঘরে জ্বর রেহাই পাচ্ছে না কেউ : বগুড়ায় ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বর। বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সের মানুষই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে বগুড়ায় কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার পরিবারে জ্বর হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, মালতিনগর, ভাটকান্দি, কলোনি, জলেশ্বরীতলা, জামিলনগর, ফুলবাড়ি মহিলা কলেজ রোড, সেউজগাড়ী, বৃন্দাবন পাড়া, চেলোপাড়া, নারুলি এলাকায় এমন অনেক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের শরীরে প্রচণ্ড জ্বরের পাশাপাশি সর্দি এবং কখনো কখনো হাত পা ব্যথা করার কথা জানিয়েছেন। বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম বাবু জানান, ঈদের আগে থেকে একটু একটু করে জ্বর হয়। প্রায় ৬ দিন ধরে জ্বরে ছিলাম। অনেকেই চিকুনগুনিয়ার কথা বলেছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ রেজাউল আলম জুয়েল জানান, ভাইরাল জর হচ্ছে ঘরে ঘরে। এমন বেশ কিছু রোগী এসেছেন। যাদের চিকিৎসা করা হয়েছে। এ সময় সাবধান থাকতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর