বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

যুবলীগ নেতার হাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খুন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

‘মাওয়া আক্তার, বয়স ১০। কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। মঙ্গলবার বাবা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘মা! তোমার জন্য কী নিয়ে আসব?’ মাওয়া আক্তার বাবাকে বলেছিল, ‘কিছু আনতে হবে না, শুধু জ্বরের ওষুধ নিয়ে আসবা।’ কিন্তু বাবা আর ফিরে এলেন না। বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে। ‘আমি ওষুধ চাই না, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। বাবার খুনিদের ফাঁসি চাই।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল খুন হওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল মান্নানের মেয়ে মাওয়া আক্তার। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মান্নান খুনের ঘটনায় পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মান্নানের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজীব দত্তের সঙ্গে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মান্নানের টেন্ডার ও টোল আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন আগে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় সজীব দত্ত মান্নানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে মান্নান সজীব দত্তের বড় ভাই জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্তকে বিষয়টি জানালে তিনি তার ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন ও মান্নানকে শাসিয়ে সাবধান করে দেন বলে অনেকে বলেছেন। এ ঘটনার জেরে সজীব দত্ত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় মান্নানকে শহরের মুন্সিরহাটে দেখতে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এক পর্যায়ে মান্নান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুম্মনকেও সজীব ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা মান্নান ও জুম্মনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে আনার পথে মান্নান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। জুম্মনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বজন ও এলাকাবাসী সজীব ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। নিহত মান্নানের মা রেজিয়া বেওয়া বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই। এখন তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আমি কোথায় যাব?’

নিহতের স্ত্রী জেমসিন আক্তার জানান, ‘আমার স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। দুই কন্যাশিশুকে নিয়ে এখন আমাকে পথে বসতে হবে। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’ পুলিশ গতকাল পর্যন্ত খুনের সাঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করছে। তারা হলেন সজীব দত্তের বড় ভাই পিন্টু দত্ত (৩৫) ও শান্তর বড় ভাই রতন (৪০)। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সুপার জানান, খুনের সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ চিহ্নিত করেছে। দোষীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চলছে। এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। খুনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

সর্বশেষ খবর