বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফেসবুকে বন্ধুত্ব ডেকে নিয়ে ধর্ষণ

চলন্ত ট্রাকে কিশোরী ধর্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

রাজশাহীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এক ছাত্রীকে বাগানবাড়িতে ডেকে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নামো শংকরবাটি নতুনহাট মোল্লাপাড়া এলাকায়। পুলিশ বলছে, সম্প্রতি ওই ছাত্রীর সঙ্গে রাজশাহীর দুই যুবকের ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। এরপর ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষকসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানা এলাকার গ্রিন  গার্ডেন নামে একটি বাগানবাড়িতে (গেস্টহাউস) এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী সোমবার দিবাগত রাত ১টায় শাহ মখদুম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ওই তরুণীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায় পুলিশ। এর পরই ঘটনাটি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় মামলার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষকসহ দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার আটক দুই বন্ধুকে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার দুই বন্ধু হলেন ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) রাজশাহী শাখার সাবেক শিক্ষক শামসুল আলম বাদশা ও রাজশাহীর গৌরহাঙ্গা এলাকার ইজিটাস কম্পিউটার দোকানের মালিক আবু ফায়েজ নাহিদ। এদের মধ্যে বাদশার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল এবং নাহিদের বাড়ি একই উপজেলার হাসনিপুর গ্রামে। তারা দুজনই রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন সাগরপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। শাহ মখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমান জানান, ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নামো শংকরবাটি নতুনহাট মোল্লাপাড়া এলাকায়। রাজধানীর ধানমন্ডির ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করে বের হয়ে চাকরির চেষ্টা করছিলেন তিনি। সাবেক শিক্ষক বাদশার সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়। চিকিৎসার জন্য ওই ছাত্রী সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে আসেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা শেষে তিনি দুপুরে ফোন দেন ফেসবুক বন্ধু বাদশাকে। এ সময় বাদশা ওই ছাত্রীকে ডেকে নেন নগরীর গৌরহাঙ্গা এলাকায় তার বন্ধুর ইজিটাস কম্পিউটারের দোকানে। ওই ছাত্রী কম্পিউটারের দোকানে গেলে বাদশা তাকে তার বান্ধবী হিসেবে নাহিদের সঙ্গে পরিচয় করে দেন। এরপর দুপুরে খাবারের কথা বলে ওই ছাত্রীকে নগরীর শাহ মখদুম থানার নওদাপাড়া এলাকার গ্রিন গার্ডেন নামের বাগানবাড়িতে (গেস্টহাউস) নিয়ে যান বাদশা ও নাহিদ। সেখানে একটি কক্ষে রেখে প্রথমে বাদশা এবং পরে নাহিদ ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে গেস্টহাউসে ফেলে রেখে চলে যান বাদশা ও নাহিদ। এরপর রাত ৮টার দিকে শাহ মখদুম থানায় যান ওই তরুণী। তিনি বাদশা ও নাহিদের নামে ধর্ষণ মামলা করলে রাতেই অভিযান শুরু করে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে গৌরহাঙ্গা এলাকা থেকে পুলিশ বাদশা ও নাহিদকে গ্রেফতার করে। ওসি জানান, তরুণীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া গ্রেফতারের পর দুই ধর্ষক ওই তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। আজ ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন শাহ মখদুম থানার ওসি।

এদিকে ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন গ্রিন গার্ডেন নামের বাগানবাড়ির মালিক সাজু। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে দুজন কর্মচারী কাজ করছেন। তিনজন ভারতীয় সেই গেস্টহাউসে অতিথি হিসেবে আছেন। কর্মচারী সোহেল জানান, তারা ঘটনা পরে শুনেছেন। এর বাইরে অন্য কিছু তারা জানেন না।

চলন্ত ট্রাকে কিশোরীকে ধর্ষণ : নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের পানির কল এলাকায় এসিআই ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কারখানার সামনে পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক থেকে ১৫ বছরের কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযোগ, তাকে ওই গাড়ির চালক ও হেলপার পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। পুলিশ বুধবার সকালে ওই ট্রাকটি আটক করলেও পালিয়ে গেছে ধর্ষণকারী চালক ও হেলপার। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানায়। তার বরাত দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বকর জানান, ওই কিশোরী মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় আসে। পরে রাত ৮টায় মালবাহী ট্রাকের (ঢাকা-মেট্রো-ট-০২-০৩৪৪) চালক মেহেদী হাছান ও হেলপার সোহান তাকে রাস্তায় একা পেয়ে ঢাকায় নেওয়ার কথা বলে জোর করে ট্রাকে তুলে নেয়। পরে ট্রাকটি নারায়ণগঞ্জ আসার পথে পথিমধ্যে চালক ও হেলপার পালাক্রমে ছয়বার ধর্ষণ করে। বুধবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পানিরকল এলাকায় এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান ফটকের সামনে থামানো ট্রাকটির ভিতর থেকে ওই কিশোরীর কান্নার শব্দ শুনে এলাকাবাসী ছুটে আসে। ওই সময় ধর্ষণকারী ট্রাকটির চালক ও হেলপার ট্রাক রেখেই কৌশলে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানান, তাদের ডাকচিৎকার শুনে ট্রাক চালক ও হেলপার এসিআইয়ের মেইন গেটের ভিতরে প্রবেশ করলেও এরপর থেকে তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। তবে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালের সিকিউরিটি কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল জানান, ওই ট্রাকটিতে তাদের কারখানার কোনো পণ্য আনা হয়নি। আর ট্রাক চালক ও হেলপারকে তারা চেনেন না। এস আই আবু বকর আরও জানান, কিশোরীকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর