বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর ছাত্রী হত্যা, গ্রেফতার ৫

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজের ছাত্রী রূপা খাতুনকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় চালক ও হেলপারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে ওই তরুণী বগুড়া থেকে ছোঁয়া পরিবহনে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। রাতের কোনো এক সময় তাকে ধর্ষণ করে লাশ সড়কের পাশে বনে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। রাতেই বনের ভিতরের সড়ক থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে মধুপুর থানা পুলিশ। পরিচয় না পেয়ে অজ্ঞাত হিসেবে পরদিন শনিবার তার লাশ দাফন করা হয়। সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে অজ্ঞাতনামা ওই তরুণীর পরনের সালোয়ার-কামিজ দেখে শনাক্ত করে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ করেন তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিক। ওই সময় তার নাম-পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই তরুণীর নাম রূপা খাতুন। তিনি ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আছানবাড়ী গ্রামের জিলহাস প্রামাণিকের মেয়ে। মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশমাইল এলাকার বনাঞ্চলের রাস্তার ধারে এক তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবর পায় মধুপুর থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে অপরাধীরা নিরাপদ ভেবে অজ্ঞাত ওই তরুণীর লাশ বনের সড়কে ফেলে রেখে যায় বলে ধারণা করে পুলিশ। তরুণীর বড় ভাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে সোমবার রাতে মধুপুর থানায় উপস্থিত হয়ে লাশের ছবি ও পরনের কাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন। পরে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে অভিযানে নামে পুলিশ। নিহত তরুণীর বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিক জানান, তার বোন রূপা খাতুন অনার্স শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। পাশাপাশি শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমশনাল ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন রূপা। শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি বগুড়া যান। পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে তার এক সহকর্মীর সঙ্গে যাত্রা করেন। সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। রূপা ওই বাসেই ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ময়মনসিংহ না পৌঁছায় তার সহকর্মীরা মুঠোফোনে কল করলে এক যুবক তা রিসিভ করে এবং রূপা ভুল করে ফোন ফেলে রেখে গেছে জানিয়ে কেটে দেয়। এর পর থেকে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার সকালে কর্মস্থলে না পৌঁছায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের শেরপুর অফিস থেকে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে খোঁজ নেওয়া হয়। রূপার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাফিজুর রহমান ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশটি পাওয়ার পর এটিকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে ঘটনার পরদিনই অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করা হয়। এর পর থেকেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকে। সোমবার রাতে নিহত তরুণীর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর তার বড় ভাইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বাসের চালক হাবিসহ (৩৫) পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর