রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় সংসদ এখন কোটিপতিদের ক্লাব

—বদিউল আলম মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘আমাদের বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা হয়ে পড়েছে “বেস্ট ডেমোক্রেসি মানি ক্যান বাই”। নির্বাচনী ব্যয়ের বৈধ সীমা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে কোটিপতির ক্লাবে। নির্বাচনের নিরাপত্তা ইস্যুতে অস্বাভাবিক অর্থ খরচ করা হচ্ছে, এটা পরিবর্তন না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। কিন্তু আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হব।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট করণীয় : ভোটার তালিকার সঠিকতা নিশ্চিতকরণ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন, নির্বাচনী ব্যয় হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘ভোটার তালিকা যদি সঠিক না হয়, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস যদি সঠিক না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ২০০৮ ও ২০১৩ সালের মধ্যে ভোটার সংখ্যার পার্থক্য বেড়ে গেছে। সুতরাং বিদ্যমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।’ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন সুবিধাভোগী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমলাদের রাজনৈতিকীকরণ করা হচ্ছে। ৬ লাখ লোক লাগে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে। এ ৬ লাখ লোক আমলা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।’ তিনি মনে করেন নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে, সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আইন হয়নি। যাকে যেভাবে দরকার তাকে সেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কমিশনারদের প্রথম “মাথা ব্যথা” নিরাপত্তা ইস্যু। নির্বাচনী বাজেটের ৭৫ শতাংশ খরচ হয় নিরাপত্তায়। শেষ নির্বাচনে, যেখানে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানেও ৩৩৩ কোটি টাকা শুধু নিরাপত্তা খাতে খরচ হয়েছে।’ ক্ষোভের সঙ্গেই তিনি জানতে চান, ‘তারা কী নিরাপত্তা আমাদের দেয়? আমরা যদি পুলিশের লোকদের জিজ্ঞাসা করি গত নির্বাচনে কোন কোন জায়গায় কী কী সমস্যা হয়েছিল, এর কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। নির্বাচন কমিশনও এ তথ্য সংগ্রহ করে না।’ এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী মেয়াদের জন্য নির্বাচন হবে এবং তা বর্তমান সংসদ বহাল রেখে। এ বিধান বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” বা সবার জন্য সমান সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা দুরূহ হবে। আর সে ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে সুদূরপরাহত।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই হবে না, নির্বাচনে সব নাগরিকের ভোটাধিকারও থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের।’ আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে শুধু সরকার ও বিরোধী দল নয়। গণতন্ত্রের প্রতি সবার আনুগত্য ও মমত্ববোধ থাকতে হবে। আমরা একটি সত্যিকারের নির্বাচন চাই।’ তিনি নিবাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ‘সোশ্যাল কন্ট্রাক্টে’ যাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়ার জন্য সুজনের প্রতি আহ্বান জানান। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা দেখছি, নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে না। তারা যদি এটি যাচাই-বাছাই না-ই করবে তাহলে তারা এটি জমা নেয় কেন? আমাদের নির্বাচন কমিশনের জনবল প্রায় ৭ হাজার। তাহলে ব্যয়ের রিটার্ন যাচাই-বাছাই করতে পারবে না কেন, তা আমার বোধগম্য নয়।’ সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তা তাদেরই অনুধাবন করতে হবে এবং সবাইকে তা জানাতে হবে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের উচিত জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ করা।’

সর্বশেষ খবর