শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রের জেগে উঠতে হবে

— সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

রাষ্ট্রের জেগে উঠতে হবে

‘ময়মনসিংহে ১৬ বছরের একটি ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো আর সমাজ বসে আছে। আমি মনে করি এটি সমাজেরও পচন। সমাজে যদি এ রকম চলতেই  থাকে যে, অপরাধীরা যখন দম্ভ করে বলবে যে, তার কিছু হবে না তখন বুঝতে হবে সেই অপরাধী মানুষ নয়, সে সব পাশবিকতাকেই হার মানিয়েছে। এসব অপরাধীকে কি আমাদের সমাজ পুষবে না তাদের যথাযথ শাস্তি দিয়ে বিচার করবে— তা এখন ঠিক করতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র একটা যন্ত্র, আর রাষ্ট্র বড় বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেও ছোট বিষয়গুলো নিয়ে না ভাবলে রাষ্ট্রের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য রাষ্ট্রের এখন জেগে উঠতে হবে এবং এই অপরাধী এবং তার মতো অন্য অপরাধীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, এ ধরনের অপরাধ বাংলাদেশে আর চলবে না। আর এ বিষয়ে দায়িত্ব রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার। সরকারকে বুঝতে হবে এসব দুর্বৃত্তকে যত ছাড় দেওয়া হবে তাদের দুর্বৃত্তপনা ততই বাড়বে।’ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজন হত্যার পর সমগ্র দেশের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ফেসবুক ও মিডিয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে বেশ হৈচৈও হয়। মনে হয়েছিল ধাক্কা খেয়ে জাতি যেন জেগে উঠেছে। আমরা আশা করেছিলাম এটি একটি চূড়ান্ত অবস্থার দিকে যাবে এবং দেশে এমন ঘটনা আর ঘটবে না। কিন্তু আমাদের সমাজে তিনটি সমস্যা সব সময় দেখে থাকি। একটি হচ্ছে অপরাধ যারা করে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিশেষ করে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা, তাদের অর্থবিত্ত এবং তাদের সামাজিক অবস্থান। এই তিন বিবেচনায় অপরাধ অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া হয় না অথবা করা হয় না। দেশে দরিদ্র মানুষ কিছু করলে শাস্তি নিশ্চিত কিন্তু প্রভাবশালী ও অর্থশালীদের ক্ষেত্রে শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না।’ এই অধ্যাপক বলেন, ‘কিশোর সাগর হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক নারী মূল অপরাধী আক্কাসকে সতর্ক করলেও তা না শুনে উল্টো দম্ভ করে বলেছিল, “মরলে মরবে, তোমাদের কী? আমার অনেক টাকা। পুলিশ কিইন্যা ফেলব।” এ ধরনের কথা এই অপরাধীকে ব্যাপকভাবে শাস্তির আওতায় আনার জন্য যথেষ্ট। পুলিশ বিভাগ যদি নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত একটি বিভাগ হিসেবে দেখতে চায় কিংবা তারা যদি স্বীকার করে যে, পুলিশকে কেনা যায় না তাহলে তাদের এই অপরাধীকে গ্রেফতার করামাত্রই সময় নষ্ট না করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আমি মনে করি শুধু পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের নেতিবাচক কথা বলার জন্য হলেও আক্কাসের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা করা উচিত। যদি পুলিশ জনগণকে আশ্বস্ত করতে চায় যে, টাকা দিয়ে পুলিশকে কেনা যায় না তাহলে এই অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। আর যদি কিছু না হয় তাহলে ধরে নিতেই হবে যে, অপরাধীই সত্যি কথা বলছে।’ মনজুরুল ইসলাম পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে বিনীতভাবে প্রশ্ন রেখে বলেন, এই অপরাধী (আক্কাস) পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে যে কথা বলেছে তা কি সত্য? আর যদি তা অসত্য হয় তাহলে প্রমাণ করুন যে পুলিশ বাহিনীকে কেনা যায় না। একই সঙ্গে এই অপরাধীর বিরুদ্ধে যত শাস্তিযোগ্য কার্যক্রম চালানো, তাকে আদালতের হাতে দ্রুত সোপর্দ করা এবং দুর্বল চার্জশিট দিয়ে এই মামলাটি যাতে ঘোলাটে না হয় তার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘শেষ কথা হচ্ছে এই, যে ছেলেটি মারা গেল তার জন্য সমাজের কি কোনো দায় নেই? একটা অসহায়-দরিদ্র ছেলে মারা গেল, আমরা কি হাত-পা ঝেড়ে বসে থাকব? আজ যদি আমরা এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকি তবে আগামীতে আমাদের সন্তানদেরও কেউ রক্ষা করবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর