শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

একটি স্রোতহীন গন্তব্যহীন নদী

মাহমুদুর রহমান মান্না

একটি স্রোতহীন গন্তব্যহীন নদী

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জাসদ তার মূল চরিত্র হারিয়েছে। এটা এখন আর নদী নেই, বদ্ধ জলাশয়ের মতো।গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ কথা বলেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি। তার ভাষায়, জাসদ নামে একটি নদী ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে এখন ক্ষীয়মাণ। জাসদ নিজেকে বলছে সমাজতান্ত্রিক দল। কিন্তু তারা নিজেরাই সমাজতন্ত্র বিশ্বাস করে না। মাহমুদুর রহমান মান্না জাসদ সমর্থিত ছাত্র সংগঠন থেকে মনোনীত হয়ে ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচন করেছিলেন। জাসদ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তখনকার ছাত্রলীগের মধ্যে স্বাধীনতা-প্রগতি নিয়ে বিতর্ক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেটা এক ধরনের বিশেষ শক্তি অর্জন করে, সেটা মুক্তিযুদ্ধের শক্তি। স্বাধীনতার পরই ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে একটা প্রগতিশীল ধারায় যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা সমাজতন্ত্রের কথা বলে, শোষিত মানুষের বিপ্লবের কথা বলে। কিন্তু এর সবই ছিল আবেগ থেকে আসা। সমাজতন্ত্রে যদিও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রেই যে বিজ্ঞান আছে, সেটা তারা ভালো করে রপ্ত করতে পারেনি কিংবা জানত না। এভাবে যাত্রা শুরু। পথ চলতে চলতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সামনের দিকে যায়। তিনি বলেন, বাস্তবতায় সমাজতন্ত্রে কোনো ক্লাসিক্যাল মডেল নেই। কিন্তু শুধু তারুণ্য আর আবেগের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে জাসদ হঠকারিতার মধ্যে ঢুকে যায়। বিশেষ করে ১৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও। সেখানে অনেক কর্মী রক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর অনেকটা রাগ করে আক্রোশে প্রতিহিংসায় গণবাহিনী গঠন করা হয়। কিন্তু সেই গণবাহিনীও আমাদের দেশে রাজনীতিতে কোনোভাবেই উপযোগী ছিল না। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্যু করে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টাও করা হয় তখন। যার প্রকাশ পায় ৭ নভেম্বর সিপাহির মধ্যে। এক ধরনের বিদ্রোহের প্রবণতা তৈরি করা হয়। গণবাহিনীর সশস্ত্র তত্পরতা ও ৭ নভেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তত্পরতার ব্যর্থতায় ব্যাপক ক্ষতি হয় জাসদের। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, এরপরই দলের অভ্যন্তরে আমিসহ মূল সংগঠন ছাত্রলীগের মধ্যেই নানা প্রশ্নের জন্ম হয়। যার কোনো জবাব তখনকার নেতারা দিতে পারেননি। হঠকারিতার বিরুদ্ধে একটা সুস্পষ্ট রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার লড়াইয়ে তখন জাসদ ভেঙে যায়। এরপর হঠকারিতা ও রোমান্টিকতার বিরুদ্ধে জাসদ সুবিধাবাদী রাজনীতি শুরু করে। জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই সেই সুবিধাবাদের রাজনীতি চর্চা শুরু হয়।

ফলে রাজনীতির বিপ্লবী ধারটাই নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরোধিতা করে যে জনসমর্থন ও আবেগ জাসদ সঞ্চয় করতে পেরেছিল, জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সেই আবেগ জাসদের পক্ষে ছিল না। ক্রমেই জাসদের শক্তি ও আবেগ ক্ষয় হতে থাকে। রাজনৈতিক তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে এখনই সমাজতন্ত্র না গণতন্ত্রের লড়াইয়ে গণবাহিনী গঠন নীতিগতভাবে ঠিক ছিল কিনা এমন সামগ্রিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আবার যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করে জনসমর্থন পেয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গেই এক বছর সময়ের ব্যবধানে আবার ঐক্য গড়ে তোলা হয়। যে জাসদের স্লোগান ছিল ‘রুখ বাকশাল, হটাও জিয়া’ তারাই আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করায় জাসদের সেই গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের ধার ভোঁতা হয়ে যায়।

তার মতে, তখন দলের অভ্যন্তরে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গণবাহিনী করার পর যারা নেতা ছিলেন, তাদের সঙ্গে গণ-সংগঠনের নেতাদের ভিতরে ভিতরে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। মেজর জলিল ও আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বের সঙ্গে যারা গণবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন, তারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। যার ফলে জাসদ টুকরা টুকরা হয়ে আজকের এ পর্যায়ে চলে এসেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, জাসদ এখন দৃশ্যত তিন ভাগে বিভক্ত। এরা সবাই অতীতে বা বর্তমানে স্বৈরশাসনের সহযোগী ছিল বা এখনো আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন, তাদের কেউ কেউ এখন বলছেন, আমরা ওই সময় যে ভুল করেছি, তার কাফফারা দিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর