রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পর দোষীদের বিচারও মিয়ানমারের দায়িত্ব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন হেনশ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সব দায়-দায়িত্ব অবশ্যই মিয়ানমার সরকারের। প্রক্রিয়া শুরুর দায়ও তাদের। মানুষগুলো যেন স্বেচ্ছায় ফিরতে পারে সে জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত এলাকা দেওয়ার বিষয়টি তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।

সিমন হেনশ আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে জড়িত দোষী ব্যক্তিদেরও বিচার করতে হবে মিয়ানমারকেই। তিনি জানান, মিয়ানমারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনরায় ভেবে দেখা হচ্ছে। সফররত সিমন হেনশ গতকাল ঢাকার আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এ সময় তার নেতৃত্বে গত শুক্রবার দুই দিনের সফরে আসা প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্কট বাসবি, দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি টম ভাজদা, পূর্ব-এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ডিরেক্টর প্যাট্রিসিয়া মাহোনি ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র হেদার নোয়ার্ট। প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখে গতকাল ঢাকা পৌঁছায়। পরে রাতেই তারা ঢাকা ত্যাগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন হেনশ বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘হৃদয় বিদারক’। আমরা মিয়ানমারেও সফর করেছি। তা ছিল ‘চোখ খুলে দেওয়ার’ মতো। এটা একটা জটিল সংকট। মিয়ানমারের সফরে আমাদের কাছে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক শাসন থেকে বেসামরিক গণতন্ত্রে ফেরা, রাখাইনের সম্প্রদায়গুলোর পার্থক্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাখাইন রাজ্য সরকারের মধ্যে কিছু জটিলতা রয়েছে। এসব কিছু বিষয়টিকে খুব কঠিন করে তুলেছে। এ কারণে রাখাইনে স্থিতিশীলতা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি সহিংসতায় জড়িতদের তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার কথা মিয়ানমার সরকারকে বলে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু ও অভিবাসন ব্যুরোর দায়িত্বে থাকা সিমন হেনশ বলেন, বহু শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। শরণার্থীদের খাবার ও আশ্রয়ের সমস্যা রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা অভূতপূর্ব। সেখানে অনেক সংস্থা শরণার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে আমরা বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। এই জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের আরও কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকায় আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কারণ ছয় লাখ মানুষ ভয়ানক পরিস্থিতিতে রয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নোয়ার্ট বলেন, রোহিঙ্গা সংকট ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে’ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন আগামী ১৫ নভেম্বর মিয়ানমার সফর করবেন। তার নির্দেশনাতেই আমরা সফর করছি। রাখাইন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার দিতে মিয়ানমারের প্রতিও আহ্বান জানান স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র। অতিথিদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

সর্বশেষ খবর