সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আতঙ্ক কাটেনি ঠাকুরপাড়ায়

আরও ৪৭ জন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেলেও আতঙ্ক কাটেনি রংপুরের ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দাদের। ফের হামলা হতে পারে—এমন আতঙ্ক সবার। তবে ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আরও ৪৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এ ঘটনায় ১০০ জনকে আটক করা হলো। এদের বেশির ভাগই জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মী। আটকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় প্রধান ইন্ধনদাতা জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি ইনামুল হক মাজেদী, সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য মাসুদ রানা ও জামায়াত নেতা মোস্তাইন বিল্লাহকে খুঁজছে পুলিশ।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক গতকালও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দাদের নিরাপদে বসবাসের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। এ সময় তিনি বলেন, নিরীহ মানুষদের হয়রানি করা হবে না। হামলার সময় পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের তোলা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর কয়েক হাজার মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় ঠাকুরপাড়ার নয়টি পরিবারের ১৮টি ঘর পুড়ে যায়। এসব পরিবারের ১১টি গরু, দুটি ছাগল, নগদ টাকা ও ধান-চাল লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষে এক হামলাকারী নিহত এবং আট পুলিশসহ ৩০ জন আহত হন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট, হরিদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সংস্থা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া ঢেউটিন ও নগদ টাকা পেয়ে পরিবারগুলো নতুন ঘর নির্মাণ করছে। এখন চলছে বেড়া দেওয়ার কাজ। ক্ষতিগ্রস্ত দীনেশ রায় জানান, ‘৪৫ বছরের জমানো সংসার পুড়ে যাওয়ার ক্ষতি এত সহজে পূরণ হবার নয়। তবে বিপদের দিনে অনেক মানুষ হামার পাশোত দাঁড়াইচে, এটায় বড় সান্ত্বনা।’ বৃদ্ধ সুধীর রায় বলেন, ‘ভয় যে একেবারে নাই তা কওয়া যাবার নেয়। তবে যত পুলিশ পাহারা দেতোচে তাতে ভয় অনেকটায় কমি গেইচে।’ রংপুর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, হামলাকারীরা কেউ ছাড় পাবে না। চার ইন্ধনদাতার মধ্যে একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য তিনজনকে গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর