বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

একেকজনের একেক কথা

কমিশনের মধ্যে ঐক্য দরকার —ছহুল হোসাইন

গোলাম রাব্বানী

একেকজনের একেক কথা

রাজনীতিবিদদের মতোই অতি কথন শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। একই বিষয়ে একেকজন একেক ধরনের কথা বলছেন। শুধু তাই নয়, কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার নয় মাসের মাথায় কিছু বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন কে এম নূরুল হুদা কমিশন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বসে এমন অতি কথনে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এ অবস্থায় কমিশনারদের মধ্যে ঐক্য এবং সমন্বয় কামনা করেছেন। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে তিন নির্বাচন কমিশনার তিন ধরনের কথা বলেছেন। আবার মাঝে মাঝে সিইসি ও নির্বাচন কমিশন সচিবও একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন। ওয়াকিবহালরা বলছেন, সিইসিসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ঐকমত্য হচ্ছে না। একেকজন একেক ধরনের মত প্রকাশ করছেন। এ জন্য অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যাচ্ছে। আবার সিইসির সঙ্গেও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের মতবিরোধ বাড়ছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি করা হয় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে। কিন্তু সম্প্রতি তাকে না জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের একদল মাঠ কর্মকর্তাকে রদবদলে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি সচিবের কাছে ‘আনঅফিশিয়াল নোট’ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে সিইসি নূরুল হুদা বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদোন্নতির এখতিয়ার ইসি সচিবালয়ের। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘কোনো এখতিয়ার নেই’। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ঐক্য এবং সমন্বয় অবশ্যই দরকার। খুব সচেতনভাবে তাদের (কমিশনারদের) বক্তব্য দিতে হবে, যাতে তারা আস্থা অসুবিধায় না পড়েন। একেকজন একেক ধরনের কথা বললে মানুষ ভুল বুঝবে।

সেনা মোতায়েন নিয়ে তিন কথা : ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি’ বলে গতকাল জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আর তার আগে সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে। কোন প্রক্রিয়ায় সেনা মোতায়েন করা হবে, এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।’ আর ইসির আইন ও বিধিমালায় সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, ‘বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি আমলে নেওয়ার চিন্তা এখনো করছে কমিটি।’ নির্বাচন কমিশনারদের এ ধরনের বক্তব্যে তাদের মধ্যে বিভক্তি ফুটে উঠছে কি না— প্রশ্নে গতকাল সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভক্তির কারণ নেই। আপনারা (সাংবাদিক) নাছোড়বান্দা লোক। উনি (মাহবুব তালুকদার) হয়তো বলেছেন, উনি (মাহবুব) কিন্তু বলেছেন, এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত না।’ সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার মনে করেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হবে— এটা তার ব্যক্তিগত মত। কমিশনের সভার বরাত দিয়ে তিনি এ কথা বলেননি।’

ইভিএম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা : সম্প্রতি রংপুর সিটিতে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সিইসি ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রংপুরে পুরনো ইভিএম ব্যবহার হবে। এমনকি অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলও করা যাবে।’ কিন্তু তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি বলেন, ‘নিজেদের তৈরি নতুন ইভিএম হবে। আর অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের সুযোগ নেই।’

যদিও কে এম নূরুল হুদা সিইসির দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যে একটি আদেশ জারি করেছিলেন যে, ‘সিইসি-সচিব ছাড়া অন্যদের ব্রিফিং করা যাবে না।’ ইসি সচিবালয় থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোও হয়। এমনকি তা জানানো হয়েছে বঙ্গভবনেও। আদেশে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব গণমাধ্যমকে জানাবেন। জনগণকে জানাতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানাবে ইসির জনসংযোগ বিভাগ।’

নিয়োগ পেয়েই বিতর্কের জন্ম : সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে ইসির সংলাপে জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলে বিতর্কের জন্ম দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। যদিও তিনি তার দেওয়া বক্তব্যে অটল থাকার কথাও জানিয়েছেন। বলছেন, ‘জিয়াই বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা। আমি এটা ওন (ধারণ) করি। কাউকে খুশি করার জন্য বলিনি। তথ্যভিত্তিক কথা বলেছি।’ এর আগে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার পরপর নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে নির্বাচন কমিশনের পরিচিতি সভা ডেকেও প্রথম বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। যদিও ওই সভা করেননি তিনি। পরে নিজ বাসায় কমিশনারদের সঙ্গে পরিচিত হন।

ঐক্য-সমন্বয় দরকার : সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ঐক্য এবং সমন্বয় অবশ্যই দরকার। খুব সচেতনভাবে তাদের (কমিশনারদের) বক্তব্য দিতে হবে। যাতে তারা আস্থা অসুবিধায় না পড়েন। ওনারা (নির্বাচন কমিশনাররা) একেকজন একেক কথা বললে কেমন হবে? কোনো কমিশনারই ব্যক্তিগত মত বললে হবে না। কমিশনার যখন বলেন, তখন কমিশনের পক্ষেই বলেন। কমিশনে যখন কোনো সিদ্ধান্ত হলো না, তখন কেন বলতে যাবেন? এমন ধরনের কথা বললে মানুষ ভুল বুঝবে। সিদ্ধান্ত যেটা নেবে— সেটাই প্রকাশ করা উচিত। যে কোনো কমিশনারের যে কোনো বক্তব্য ধরে নিতে হবে সমস্ত কমিশনের বক্তব্য। কমিশন হচ্ছে একক সত্তা বিশিষ্ট সাংবিধানিক সংস্থা। যে কোনো সিদ্ধান্ত হতে হবে সমস্ত কমিশন বসেই। কোনো সিদ্ধান্ত কমিশনে না নিলে, তা কমিশনের সিদ্ধান্ত হয় না। কোনো কমিশনার এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছু বলাও ঠিক হবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর