বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা নিয়ে নজিরবিহীন সংকটে দেশ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সামরিক অভিযান ও সহিংসতার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। এখনো প্রতিদিন দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘকাল তাদের বাংলাদেশে রাখা সম্ভব হবে না। লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ ‘নজিরবিহীন সংকটের’ মুখোমুখি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ সমস্যা সমাধানে সফল হব। জাতীয় সংসদে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মো. আবদুল মতিন (মৌলভীবাজার-২) এর তারকা চিহ্নিত লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংসদ নেতা আরও বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের লক্ষ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অনুসন্ধানী দল ইতিমধ্যে কক্সবাজার সফর করে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা মিয়ানমারে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি আজ সবার দাবি। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও সে সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আমি জাতিসংঘে পাঁচ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। এরপর এ পর্যন্ত এই ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে ছয়টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভায় জোরপূর্বক বিতাড়িত সব মিয়ানমার নাগরিককে স্বদেশ ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কর্মতৎপরতায় মিয়ানমারের জাতিগত নিধন বন্ধের দাবিটি আজ সর্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা আন্তর্জাতিক মহলের জোর সমর্থন আদায়ে সফল হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৭৩তম আইপিইউ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জরুরি রেজুলেশন নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিপিএ সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সে দেশকেই করতে হবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা জিয়া সৃষ্টি করেছেন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের বিষয়ে ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি তো তাদেরই সৃষ্টি। তার স্বামী জিয়াউর রহমানই তো সমস্যার সৃষ্টি করে রেখে গেছেন। ঘোলা পানিতে কীভাবে মাছ শিকার করবে তা তারা ভালোই জানে। এটা বাস্তবতা। তাই তার (খালেদা জিয়া) বক্তব্য আমি ধর্তব্যের মধ্যে আনি না। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে ছাগলে কি না খায় পাগলে কি না বলে। আসলে চক্ষু থাকিতে যে অন্ধ তাকে দেখাবে কে? এটা হচ্ছে একটা অনুভূতির ব্যাপার, বোধের ব্যাপার, এদের তা নেই। খালেদা জিয়া সেখানে যেভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে লটবহর নিয়ে গেলেন। তাতে তিনি দুর্গতদের দেখতে গেলেন নাকি বরযাত্রী হিসেবে গেলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আসলে একটা শোডাউন করার ইচ্ছা তাদের ছিল তা তিনি করেছেন। কিন্তু মানবিক সহায়তা করার অভ্যাস বা ইচ্ছা তাদের নেই। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৯১ সালে আরও একবার রোহিঙ্গারা এ দেশে প্রবেশ করেছিল। সে সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আমি আগেই গিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারপ্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া সেখানে সময়মতো পৌঁছান নাই।

আবদুর রহমান বদির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে সেখানকার স্থানীয় গরিব মানুষেরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। এদের রেশনসহ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের জীবন-জীবিকার সুবিধা দেওয়া, তারা যাতে অভুক্ত না থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করব। তাদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন তা আমরা করব।

সর্বশেষ খবর