রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাবির সেই অপহৃত ছাত্রী ঢাকায় উদ্ধার

সাবেক স্বামী গ্রেফতার

মর্তুজা নুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে অপহৃত ছাত্রীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপহরণকারী তার সাবেক স্বামী সোহেল রানাকে আটক করা হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম ছাত্রী উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের অবস্থান ঢাকায় পাওয়া যায়। রাতেই রাজশাহীর পুলিশের একটি টিম ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করে তারা। এ সময় অপহরণকারী সোহেলকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রী ‘অপহরণের’ ঘটনায় অপহরণকারী সোহেল রানার বাবা জয়নাল আবেদিনকে আটক করে পুলিশ। নওগাঁর পত্নীতলার সরদারপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। তবে ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে শিক্ষার্থী অপহৃত হওয়ায় আবারও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার সকালে ক্যাম্পাস থেকে অপহৃত হন বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ওই ছাত্রী। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হল থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। হলের ফটক থেকে ৫০ গজ এগোতেই তাকে জোর করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয় কয়েকজন যুবক। এ ঘটনায় তার সাবেক ‘স্বামী’ সোহেল রানা জড়িত বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এক বছর আগে বিয়ে হলেও দুই মাস আগে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। সহপাঠীকে ফেরত ও অপহরণকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে শুক্রবার বিকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা ১৫ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শুক্রবারের কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল ১০টায় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ছাত্রীদের হলগেটে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে হলের গেটে জড়ো হলে ছাত্রীদের বের হতে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে আন্দোলনে যেতে চাইলে তাদের হল থেকে বের হতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলন করার কথা থাকলেও তারা বের হতে পারেননি। পরে জোর দাবির মুখে বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ এবং প্রক্টরিয়াল বডি তাদের বের হতে দেয়। এরপর বেলা ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে তারা প্রেস ব্রিফিং করে সাত দফা দাবি জানান। অপহৃত ছাত্রীকে ফেরত দেওয়া না হলে ২টার পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। পরে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তারা সময় বেঁধে দিতে গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেন। এর আগে হল থেকে বের হলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গ্রন্থাগারের সামনে আসেন ছাত্রীরা। তাদের সাত দফা দাবিগুলো—অপহৃত ছাত্রীকে ফেরত, ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত, মহিলা হলের সামনে পুলিশ চেকপোস্ট, প্রতিটি হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেটে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, সান্ধ্য আইন বাতিল, সব হলে অভিভাবক প্রবেশের অনুমতি ও প্রতিটি বিভাগকে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা। এদিকে দিনদুপুরে ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রী অপহরণ ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। গত বছর ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলে খুন হন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ইয়াবা চক্রে রাবি ও রুয়েটের ৪৪ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উঠে আসে। এ ছাড়া প্রায়ই ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা, বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, স্থানীয়দের দ্রুতগতির যানবাহন ছোটানোর ফলে দুর্ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ খবর