রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাকায় ক্ষমতাধর চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা চারটি দেশ—চীন, জাপান, সুইডেন ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এখন ঢাকায়। গতকাল বিভিন্ন সময়ে তারা রাজধানীতে এসে পৌঁছেছেন। সফরে এসেছে মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের একটি প্রতিনিধিদলও। এদের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় তার দেশের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধামনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং ই বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ আয়োজনে ইচ্ছুক। বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) নিয়ে যে অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে তাতে ধীরগতি আসতে পারে।’ রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করেন ওয়াং ই। তিনি বলেন, ‘এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এ সমস্যা এখন বাংলাদেশকে প্রভাবিত করেছে।’ বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সংকটের স্থায়ী সমাধানে নিরাপত্তা ও মর্যাদা দিয়ে মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু এরা (রোহিঙ্গা) তাদের নাগরিক। তাই তাদের ফেরত নিতে হবে।’ বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন  সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সব গুরত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সময় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতিতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। আলোচনায় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুতদের ইস্যু উত্থাপিত হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ের বন্ধু হিসেবে চীন শান্তিপূর্ণভাবে সংকট সমাধানে সহায়তা করবে এবং কোনো পক্ষ নেবে না। সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ ঢাকায় এসে পৌঁছবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ইইউ হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ। তাদের নিয়ে আজ একসঙ্গে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল দুপুরের আগে আগে বিশেষ বিমানে ঢাকা এসে পৌঁছান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। রাত ৮টার পরপরই বিশেষ বিমানে পৌঁছান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল। এরপর আসেন সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো। আজ ভোরে পৌঁছেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ফেদেরিকা মোগেরিনি। তারা হেলিকপ্টারে করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার ক্যাম্পে সময় কাটাবেন জাপান, সুইডেন, জার্মানি ও ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব, চিফ অব প্রটোকল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা তাদের সঙ্গে থেকে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ তত্পরতা ঘুরে দেখাবেন। সরাসরি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কথাও শুনবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বিকালে ঢাকায় ফিরে তারা পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ-বৈঠক করবেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। পরে আজ সন্ধ্যায়ই নিজ নিজ বিশেষ বিমানে মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন জাপান, সুইডেন ও ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তাদের বিদায় জানিয়ে রাত ৯টার দিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ বিমানে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর