সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চলতি মাসেই হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান  বেকারিতে হামলা চালানো হয়েছিল। চলতি মাসেই দেওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার চার্জশিট। আমরা এ বছরই চার্জশিট দিতে চেয়েছিলাম। তবে কতিপয় আসামির বিরুদ্ধে আমাদের তথ্যের অভাব ছিল। এখন পলাতক আসামিদের গ্রেফতার সম্ভব না হলেও তাদের পলাতক দেখিয়ে চার্জশিট দেওয়া হবে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় শনাক্ত হওয়া আসামিদের কয়েকজন ধরা পড়েছে। কেউ কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। হামলা মামলার তদন্ত অনেক আগেই শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও কিছু আসামির ব্যাপারে কনফিউশন ছিল। মামলার আসামি হলেও বাশারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজান পলাতক ছিল।  চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিছুদিন আগে অপারেশনে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছিলাম ওখানে নিহতদের চেহারার সঙ্গে চকলেট ও ছোট মিজানের মিল রয়েছে। পরে ডিএনএ প্রোফাইল মিলে যাওয়ায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। হাদিসুর রহমান সাগর নামে একজন আসামি পালিয়ে আছে। হলি আর্টিজান হামলা মামলা তদন্তে আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, হামলায় অর্থ দেওয়ার অভিযোগে আকরাম হোসেন নামের একটি নাম এসেছে যাকে খোঁজা হচ্ছে। ১৫ আগস্ট পান্থপথে হোটেল ওলিওতে হামলারও অর্থ জোগানদাতা এবং নির্দেশনা সে দিয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অনেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রাজিব গান্ধী, রাশেদ গ্রেফতার হয়েছে, রিগ্যান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পাঁচজনকে জীবিত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি সোহেল মাহফুজকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও সাক্ষী হিসেবে তানভীর কাদেরীর ছেলে ও স্ত্রী ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। হামলার পেছনে কারা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনার পেছনে মূল মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। তার সহযোগী ছিল সারোয়ার জাহান ও পলাতক মেজর জাহিদ। এরা মূলত আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিল। বড় হামলা করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যেন আইএস তাদের সহযোগী হিসেবে নেয়। তবে সেগুলো আইএস ডাইরেক্টেড অপারেশন নয়। তদন্তে এমন কিছু নেই যে ঘটনাটি নিয়ে আইএসের সঙ্গে আলাপ করেছে বা আইএস জানত। ঘটনার সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। নব্য  জেএমবির সদস্য হিসেবে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের। তাদের উদ্দেশ্য দেশে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করা। রেজিস্টার্ড অনেক দল শরিয়াহ আইন চায়। তবে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চায়। কিন্তু জঙ্গিরা সরাসরি কথিত জিহাদের মাধ্যমে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করতে চায়। এ রকম একাধিক সংগঠন চায় দেশে শরিয়াহ আইন চালু হোক। পথ ভিন্ন হলেও লক্ষ্য তাদের এক। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। জঙ্গিরা ওই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে। নিহতদের নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয়। হামলায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়।

সর্বশেষ খবর