শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা

--------- মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও বিনিয়োগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্য দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সৌদি আরব ও কুয়েতে বাণিজ্যিক ভবনসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এসব ভুয়া কল্পকাহিনীর মূল উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা। এতে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসাপরায়ণতা, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা, অন্তঃসারশূন্যতা ও দেউলিয়াপনাই প্রমাণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কাচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়বেন না। বেআইনি মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধ করুন এবং এই মানহানিকর মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। আপনার এই মিথ্যা, অশালীন বক্তব্য সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হব। গতকাল বেলা ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি করেন। বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) অনৈতিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কল্পিত পাচারকৃত সম্পদ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কারও বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচার অথবা বিনিয়োগের কোনো অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। অবৈধ ফখরুদ্দীন ও মইন উদ্দিন সরকার এবং শেখ হাসিনার অনৈতিক অবৈধ সরকার তন্ন তন্ন করে সারা বিশ্বে খোঁজ করেও আজ পর্যন্ত কোনো সম্পদের অস্তিত্ব পায়নি। বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সম্পদের কল্পকাহিনী তৈরি করে গণমাধ্যমকে দিয়ে জোর করে তা প্রচারের অপচেষ্টা শুধু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা, রাজনৈতিক সংকীর্ণতার বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু রাজনীতিকে কলুষিত করছে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করবে। আমরা আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এসব বানোয়াট তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে এ ধরনের মানহানিকর মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হব।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিহিংসাপরায়ণ : কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যদি তার অধীনে নির্বাচন করতে যায় তাহলে তারা নিজের কবর নিজেই রচনা করবে। কারণ ওই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো মানেই থাকবে না। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আহমেদ বলেন, তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তা প্রতিহিংসাপরায়ণ ও বিকারগ্রস্ত বক্তব্য। সেখানে ছিল ব্যক্তিগত গালিগালাজ। তিনি নিজেকে খুব উঁচু ভাবেন আর অন্যদের খুব নীচু ভাবেন। কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সৈয়দ শামসুল হক মিলনায়তনে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন।

এ সময় জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, সহসভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, শফিকুল ইসলাম বেবু, যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে তা রক্তাক্ত নির্বাচন, ভোট কেড়ে নেওয়ার নির্বাচন, ভোট কেন্দ্র দখল করার নির্বাচন। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে শেখ হাসিনাকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ওনার হাতে ক্ষমতা আছে তা দিয়ে তিনি মিছিলের ওপর, জনগণের অধিকারের পক্ষে কথা বলার ওপর নিষ্ঠুর দমন প্রক্রিয়া চালাতে পারেন। কিন্তু এটা সব সময় যে সফল হবে তার কোনো কারণ নেই।

সর্বশেষ খবর