শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি

দুদককে নথিপত্র দিয়েছে আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্য

মোস্তফা কাজল

আলোচিত পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে তাদের নথিপত্র পাঠিয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর এসব নথিপত্র পাঠানো হয়। এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম এসেছে— নথিপত্রে তাদের কয়েকজনের আংশিক তথ?্য রয়েছে। নতুন এসব তথ্যের ফলে দুদকের অনুসন্ধান কাজ নতুন গতি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম?্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পানামা পেপারসের কাজ এখনো শেষ হয়নি। মানি লন্ডারিং যখন হয় তখন কারও কাছে তথ্য থাকলেও হুট করে তা পাওয়া যায় না। একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটাকে বলে এমএলএআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট) পাঠানো। আমরা এটি একাধিকবার পাঠিয়েছি। এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বার বার তাগিদও দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করছি। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পানামা পেপারসের তালিকায় আসা বাংলাদেশি বেশ কয়েকজনের বিষয়ে ৬ দেশে তথ্য জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য থেকে চিঠির উত্তর এসেছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কানাডা থেকে এখনো উত্তর পাওয়া যায়নি। যে তিন দেশ থেকে উত্তর এসেছে তাতে অনেক তথ্য পরিষ্কার হয়নি। যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দুদকের প্রেরিত চিঠির বিষয়ে ওইসব দেশ থেকে বলা হয়, আমরা যেন ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে অবগত করি। নইলে অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের যে অভিযোগের কথা দুদক বলছে- সেই তথ্য তারা দিতে পারবে না। কর্মকর্তারা বলেন, আমরা এখন তাদের নির্দেশনা অনুসারে ওইসব ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদক এ পর্যন্ত ১৮ জন ?ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা জানান, ২০১৬ সালের প্রথমদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) পানামা পেপারস নামে নথি প্রকাশ করে। যেখানে এক কোটি ১০ লাখ নথি ফাঁস করা হয়। ওই তালিকায় বিশ্বের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানসহ শতাধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রমাণ রয়েছে। যাতে ৩৪ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। এরপর ওই বছরের ৭ এপ্রিল দুদকের উপ-পরিচালক এস এম আখতার হামিদ ভূঁঞাকে প্রধান করে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছিল। কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত এ কেলেঙ্কারিতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৪ জন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েছে। যাদের বিপরীতে মোট ৪৫টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

এদের মধ্যে ২৩ জনের বাড়ির ঠিকানাও উল্লেখ আছে। আইরিশ টাইমসের ডিজিটাল প্রোডাকশন বিষয়ক সম্পাদক কিলমার্টিনের তৈরি গ্রাফিক্স ম্যাপে বাংলাদেশের ২৫ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বেনিফিশিয়ারির নাম এসেছে। এর মধ্যে ২২  শেয়ার হোল্ডার, ১ সুবিধাভোগী ও ২ কোম্পানির কথা জানানো হয়েছিল। আইসিআইজের হস্তগত গোপন নথি অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রভাবশালী কয়জন ব্যবসায়ী বিদেশে কোম্পানি স্থাপন করে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম এসেছে, কমিশনে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে আনুষ্ঠানিক নথি খোলা হয়েছে। তবে দুদক আপাতত ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অন্যান্য দুর্নীতির বিষয় অনুসন্ধান করবে। এর সঙ্গে যদি কর ফাঁকি চলে আসে, তাহলে সে বিষয়টি এনবিআরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর