শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘বন্দুকযুদ্ধে’ বনানীর ব্যবসায়ী হত্যার দুই আসামি নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডার আফতাবনগরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাদ্দাম হোসেন (২৫) ও আল আমিন (৩২) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশের  ভাষ্য অনুযায়ী তারা হত্যা, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি মামলার আসামি ছিলেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। ডিবির দাবি, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আফতাবনগরে অভিযান চালালে উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হন আল আমিন ও সাদ্দাম। তাদের নামে রাজধানীর অনেক থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। তারা বনানীতে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সী হত্যা ঘটনায় জড়িত। তবে নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, ডিবি পরিচয়ে ধরে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর মুন্সী সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হেলাল নামে একজনকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত পিচ্চি আল আমিন ও সাদ্দাম নামে আরও দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর দুই দিন পরই এ দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন। এদিকে নিহত সাদ্দামের বাবা হাসমত হোসেন জানিয়েছেন, সাদ্দাম স্ত্রী লিজা ও চার বছরের মেয়ে সোহানাকে নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার মালেকের বাড়ী এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে তিনি একটি মোম ও মশার কয়েল কারখানা চালাতেন। ২৪ নভেম্বর সাদ্দাম স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় স্ত্রীর বড়বোনের বাসায় বেড়াতে যান। ওইদিনই সন্ধ্যায় ডিবি পরিচয়ে চারটি গাড়ি নিয়ে ওই বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সাদ্দাম। গতকাল এলাকার লোক মারফত ক্রসফায়ারের খবর শুনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে এসে তিনি সাদ্দামের লাশ পান। নিহত আল আমিনের স্ত্রী খাদিজা আক্তার জানান, আল আমিন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে। বর্তমানে তারা দক্ষিণখানের আটিপাড়ায় এক বছর ধরে থাকেন। আগে গাজীপুরের বড়বাড়ী এলাকায় থাকতেন। নাইম হাসান নামে তিন মাসের একটি ছেলেও আছে তাদের। আল আমিন বিভিন্ন মেলায় খেলনা বিক্রি করতেন। খাদিজা জানান, গত ১ ডিসেম্বর জুমার নামাজ শেষে বাসায় এসে বেরিয়ে পড়েন আল আমিন। তিনি বাসার বাইরে একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খান। এর মধ্যে তিনি জানতে পারেন আল আমিনকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি। গতকাল এলাকার লোকজনের কাছে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর শুনে ঢামেক মর্গে লাশ শনাক্ত করেন। স্বজনদের অভিযোগ, নিহতদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অপকর্মের অভিযোগ নেই। ডিবি পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তারা। ডিবির সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) গোলাম সাকলাইন শিথিল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আফতাবনগরে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে আল আমিন ও সাদ্দাম আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, নিহত দুজনই বনানীতে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সী হত্যার ঘটনায় জড়িত। প্রসঙ্গত, ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১১৩ নম্বর বাড়িতে এস মুন্সী ওভারসিস নামক প্রতিষ্ঠানে ঢুকে সিদ্দিক মুন্সীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের তিনজন আহত হন।

সর্বশেষ খবর