বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্যারিসে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করব

প্রতিদিন ডেস্ক

দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করব। কারণ, জনগণ আমাদের পক্ষে রয়েছে। আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত।’ খবর বাসস।

গতকাল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আওয়ামী লীগের ফ্রান্স শাখা আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন। ওয়ান প্লানেট সামিট উপলক্ষে তিন দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে প্যারিস অবস্থান করছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘নিশ্চিত বিজয়’ যেন কোন্দলের কারণে হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেজন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রেই আমাদের কিছু করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রচার শুরু হয়ে যায়। হাতে আর আট-নয় মাস সময় আছে। আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো খুব দ্রুত করতে চাচ্ছি। উন্নয়নের ছোঁয়াটা সাধারণ মানুষের কাছে যেন পৌঁছায়।’ বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অতীতে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তারা আবারও ক্ষমতাসীন হলে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। এ ব্যাপারে প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। তাদের এই মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে লুটপাট, দুর্নীতির বিষয়ে মানুষকে সজাগ করতে হবে।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের আচরণের ক্ষেত্রে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, তা হলো দেশের সম্মান। এই সম্মান যেন কারও আচরণে ক্ষুণ্ন না হয়। এ বিষয়টার দিকে সবাই অত্যন্ত সজাগ থাকবেন, নজর রাখবেন। এটুকুই আমার অনুরোধ থাকবে।’ প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের একেবারে প্রতিবেশী, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে না। কিন্তু এই সমস্যাটা তাদের সৃষ্ট। তাদের দেশের নাগরিকদের তাদের ফেরত নিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকের সমর্থন আমরা পেয়েছি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সমর্থন পেয়েছি সারা বিশ্বের। সব দেশের সরকারের নয়, কিন্তু আমরা সারা বিশ্বের মানুষের সমর্থন পেয়েছি। আর এই ঘটনায় (রোহিঙ্গা সংকট) পৃথিবীর প্রায় সব দেশই বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে।’

নিরাপদ পৃথিবী গড়তে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রত্যাশা : ওয়ান প্লানেট সামিটে নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে এ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অংশ নিয়েছেন। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর প্রতি আমি আহ্বান জানাতে চাই— জলবায়ু সংকটে সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসের দায় মেটাতে তারা যেন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন। কেবল যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা এই পৃথিবীকে নিরাপদ করতে পারি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জলবায়ু প্রশ্নে আমাদের যৌথ অঙ্গীকার ও উদ্যোগ শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে, সাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।’ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে ফরাসি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফরাসি বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ফরাসি কোম্পানিগুলোর প্রতি বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্রান্সের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক প্রাতরাশ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে শিল্পায়িত করতে আমরা দেশজুড়ে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি মনে করি প্রচলিত বাণিজ্যিক ক্ষেত্র ছাড়াও বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি ও সামুদ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’ ফ্রান্সের বৃহত্তম নিয়োগকারী ফেডারেশন মুভমেন্ট অব দি এন্টারপ্রাইজেস অব ফ্রান্স (এমইডিইএফ) গতকাল সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্যারিস লা গ্রাঁদে এ প্রাতরাশ বৈঠকের আয়োজন করে।

 বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের তার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। আর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

 তিনি বলেন, ‘আপনাদের যেমন প্রতিযোগিতামূলক বিকল্প উত্স খোঁজা দরকার, তেমন আমাদেরও রপ্তানি গন্তব্য বহুমুখী করা প্রয়োজন। আর এ দুয়ের সমন্বয় আমাদের দুই দেশের জন্যই লাভজনক অংশীদারিত্বের একটি যথার্থ পরিবেশ তৈরি করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে সহযোগিতার সম্ভাবনাময় নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে ভাবার এটি একটি উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, অনেক সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত বছর ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বিপুল সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বেড়েছে দেখে তিনি উত্সাহিত বোধ করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার দ্বিমুখী বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর