নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাশ ফিরে আসার ঠিক দুই দিন পর খোঁজ মিলল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের। প্রায় দেড় মাস পর বৃহস্পতিবার রাতে চোখ বাঁধা অবস্থায় বিমানবন্দর সড়কে তাকে নামিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ডেকে বনশ্রীর বাসায় ফেরেন সিজার। গতকাল সকালে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রীর নিজ বাসার সামনে সিজার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ছয় মিনিটে দীর্ঘ দেড় মাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। মোবাশ্বারও বললেন টাকার জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এ সময় বাবা, বোন ও চাচা তার সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সিজার ফিরে আসার পর আমরা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। পর্যায়ক্রমে তার সঙ্গে কথা বলব।’
সিজার বলছিলেন, ৭ নভেম্বর ঢাকার আগারগাঁওয়ে একটি বৈঠক শেষে ইউএনডিপি ভবন থেকে উবার ডেকে ফেরার পথে তিনি অপহূত হন। প্রায় দেড় মাস তাকে অন্ধকার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। বাসার নিচে নেমেই চারপাশে তাকিয়ে তিনি বলেন, অনেক দিন পর দিনের আলো। জানালেন, যে ঘরটিতে এত দিন বন্দী ছিলেন সেখানে একটি জানালা ছিল। কিন্তু সেটি সিল করে বন্ধ করে দেওয়া। ফলে ঘর থাকত অন্ধকার। ময়লা তোশক ছিল। সেখানে ঘুমাতেন। পাশেই আরেকটি ঘর ছিল। সেখান থেকে অন্য মানুষের কথাবার্তা শোনা যেত। হোটেলের ঠাণ্ডা খাবার দেওয়া হতো। তার ভাষ্য, অপহরণকারীদের মধ্যে বাক?বিতণ্ডা চলছিল। একে (সিজার) রাখব, না মেরে ফেলব— কিছু দিন তারা এ রকম কথাবার্তা বলেছিল। মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘অপহরণকারীরা বিভিন্ন সময় টাকাপয়সা নিয়ে কথা বলত। আমার সঙ্গে থাকা ২৭ হাজার টাকাও তারা নিয়ে নেয়। কিছু দিন ধরে তাদের মধ্যে বাক?বিতণ্ডা চলে। মনে হতো অপহরণকারীদের কেউ “মিসিং” হয়েছে। অপহরণকারীরা আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে বড় কেউ (উচ্চপর্যায়ের) আছে কিনা জানতে চাইত।’ ফিরে আসার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিজার বলেন, ‘টানা দেড় ঘণ্টা গাড়ি চলেছিল। আমার চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল তারা। একজনের কোলের ওপর শুইয়ে দিয়েছিল। সবশেষ বিমানবন্দর সড়কের কোনো এক জায়গায় অপহরণকারীরা আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায়ই নামিয়ে দেয়। বলে, “তুই চলে যা পেছনে তাকালে মেরে ফেলব।” পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ডেকে বাসায় ফিরে আসি।’ সিজার বলেন, ‘৭ নভেম্বর ঢাকার আগারগাঁওয়ে একটি বৈঠক শেষে ইউএনডিপি ভবন থেকে বাসায় ফেরার জন্য উবার ডেকেছিলাম। গাড়িতে ওঠার পর ফোনে কাজ করছিলাম। রোকেয়া সরণিতে আসার পর কয়েকজন এসে ওই গাড়িটি থামায়। তারা বলে, “এটি চোরাই গাড়ি, নামতে হবে।” নামার পর যখন আরেকটা গাড়ি খুঁজতে যাব ঠিক তখনই পেছন থেকে আমার চোখে মলম লাগিয়ে দেওয়া হয়। চোখ জ্বলছিল। তাকাতে পারছিলাম না। এ সময় পেছনে থাকা একটি মাইক্রোবাসে ধাক্কা দিয়ে তোলা হয় আমাকে। তোলার পর তারা কিছু একটা মুখে চেপে ধরে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তবে জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখি আমাকে একটা অন্ধকার কক্ষে রাখা হয়েছে। আমার হাত পেছনে বাঁধা ছিল।’ ‘নিখোঁজ’ থাকার সময় গণমাধ্যমের ভূমিকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান সিজার। তার বাবা মোতাহার হোসেন ও বোন তামান্না তাসনিম বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কোনো প্রশ্নও নেই। আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আমরা খুব খুশি।’