শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

উচ্ছ্বাসে জাতীয় পার্টি চরমোনাই পীরের প্রার্থীরও চমক

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে বিজয় পাওয়ার পর জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এখন উচ্ছ্বসিত ও চাঙ্গা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দলের কাকরাইল কার্যালয়সহ সারা দেশে জাপা নেতা-কর্মীরা একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন। তারা এ জয়ের ধারা ধরে রাখতে চাইছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত।

পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রংপুর পল্লীবন্ধু এরশাদের ঘাঁটি, বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হবে গোটা বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। তিনি বলেন, রংপুরের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব। একতাই সব। তার ওপর আমাদের পুঁজি আছে, সে পুঁজি বা মূলধন হচ্ছেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার জামানার উন্নয়ন। ওই উন্নয়নের কথা প্রচার করলে, সুশাসনের কথা প্রচার করলে, নিরাপত্তার কথা ভাবলে— মানুষ আমাদের অবশ্যই সব নির্বাচনে জয়ী করবে। রসিক নির্বাচনের মাধ্যমে এ জয়ের ধারা শুরু হয়েছে। আমরা রংপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। এদিকে পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে বিজয়ের পর জাতীয় পার্টির ঘুমিয়ে থাকা কর্মীরা আবার জেগে উঠবে। উর্বর জমিতে আবারও লাঙ্গলের চাষাবাদ শুরু হবে। আর এজন্য তারা দলীয় ঐক্যকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। জাপা সূত্রে জানা গেছে, জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন বৃহত্তর রংপুরের গাইবান্ধা-১, সুন্দরগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলাফলও নিজেদের ঘরে নিতে চাইছে জাপা। রসিক নির্বাচনের বড় জয় ওই নির্বাচনকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে তাদের ধারণা। দলের কর্মীদের মতে, রসিক নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সরকার গঠন করতে চায় জাপা। নেতা-কর্মীরা বলেন, যে কোনো দেশের রাজনীতিতে পজিশন-অপজিশনের বাইরে তৃতীয় একটি দল রাজনীতিতে টিকে থাকা কষ্টের। তা সত্ত্বেও বিএনপি-আওয়ামী লীগের বাইরে এ দলটি প্রায় সব নির্বাচনেই বৃহত্তর রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মানজনক আসন পায়। বর্তমানে জাতীয় পার্টি দেশের প্রধান বিরোধী দল হলেও সরকারে তাদের মন্ত্রী থাকায় সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও সমালোচনা করে আসছেন। আবার অনেকে সরকারের আজ্ঞাবহ বিরোধী দল হিসেবেও টিপ্পনী কাটেন। এমন একটি সময় রংপুরে দলের এ বিপুল বিজয় আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতে আবারও নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। নেতা-কর্মীরা বলছেন, আগামীতে উন্নয়ন ও সহনশীল রাষ্ট্রের জন্য এরশাদের জাতীয় পার্টি ছাড়া বিকল্প নেই। লাঙ্গলের এ বড় বিজয় নেতা-কর্মীদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। রসিক নির্বাচনের মতো আগামীতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে অবশ্যই জাতীয় পার্টি জয়লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। ভোটারদের মাঝে উপলব্ধি হয়েছে, দেশ কার শাসনামলে ভালো চলেছে। আমি বিশ্বাস করি, রংপুরবাসীর এ ভোট জাতির জন্য মেসেজ। দেশবাসী পরিবর্তন চায়, হিংসা বা প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখতে চায় না। এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টা কাজী মামুন বলেন, রসিকে বিপুল জয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে দেশবাসী এরশাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এ জয়ে সারা দেশে দলীয় নেতাদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। আমরা কর্মীদের উচ্ছ্বাস ধরে রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বৈতরণী পার হয়ে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করতে চাই।

চরমোনাই পীরের প্রার্থীরও চমক : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু ২৪ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির মতো ডাকসাইটে দলের প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের মাঠে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন বাবু।  এ নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। সেখানে গোলাম মোস্তফা বাবু পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬ ভোট। গত নির্বাচনে মেয়র পদে বাবু পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৬৮১ ভোট। গত নির্বাচন থেকে এবার তার ভোট ৮ হাজার ৩২৫। অথচ এ নির্বাচনে বাসদ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মেয়র প্রার্থীর জামানত খোয়া গেছে। অনেকেই মনে করছেন, বাবু মেয়র নির্বাচিত হতে না পারলেও তার দলের জনসমর্থন বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর