শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
পদদলন ট্র্যাজেডির প্রতিবেদন

তিন কারণ পাঁচ সুপারিশ, একক গাফিলতি নেই

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলিত ঘটনার জন্য তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় কারও একক গাফিলতি খুঁজে পায়নি তারা। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্য পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহারের হাতে জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসেন। শুরু থেকে এ ঘটনা ‘নাশকতা’ কি না এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এলেও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে তা তো মেনে নিতেই হবে। শুরুতে আমরা এ ঘটনা নাশকতার কি না তা সন্দেহ করেছিলাম। এখন আমাদের চিন্তা যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পরিবারের পাশে থাকা।’ পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান মোস্তাইন হোসেন বলেন, পদদলনের ঘটনার জন্য এককভাবে কেউ জড়িত নয়। রীমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশমুখের নির্মাণে ত্রুটি, আয়োজনের তুলনায় অধিকসংখ্যক লোকের আগমন এবং প্রবেশের সময় হুড়োহুড়ি করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রতিবেদনে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো— রীমা কনভেনশন সেন্টারের ভবন নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদন না থাকলে কমিউনিটি সেন্টারের মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ; বেশি লোকের সমাগমের ক্ষেত্রে খোলা জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া; অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে আয়োজনের স্থান ও আগত লোকসংখ্যার বিষয় বিবেচনা করে অনুষ্ঠানের স্থান নির্বাচন করা; অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক, নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের আরও সচেতন হওয়া; এবং অনুষ্ঠানে আগত লোকজনের অধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন বেলা ১১টা থেকে মেজবান খাওয়ার জন্য কমিউনিটি সেন্টারে আসতে থাকেন আমন্ত্রিতরা। ১২টা থেকে প্রতি ব্যাচে ৭২০ জন করে খাওয়ানো শুরু হয়। ১টার পর বাইরে প্রচুর লোকের সমাগম হলে আয়োজক কমিটি ও কমিউনিটি সেন্টারের নিরাপত্তাকর্মীরা দুটি গেট বন্ধ রাখেন। একপর্যায়ে পুলিশের দুটি অতিরিক্ত মোবাইল টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। প্রবেশপথে কমিউনিটি সেন্টারের নিরাপত্তাকর্মী মাহমুদুল হক ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে নিরাপত্তাকর্মী মাহমুদুল হক পশ্চিম পাশের গেট খুলে দিলে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থাকা দেড় থেকে দুই হাজার লোক হুড়োহুড়ি করে ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে। সড়ক থেকে কনভেনশন সেন্টারের পশ্চিম গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশের স্থানটি আনুমানিক চার ফুট ঢালু এবং গেট বরাবর ভিতরে একটি দেয়াল আছে। প্রবেশ গেট থেকে ভিতরের দেয়ালের দূরত্ব প্রায় ২৪ ফুট। প্রবেশপথের গেটের ভিতরে ডান দিকে খাড়া নিচু খাদ রয়েছে। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে অপেক্ষায় থাকা লোকজন হুড়োহুড়ি করে প্রবেশ করতে গিয়ে গেটের ভিতরে প্রবেশপথের ডান দিকে খাদে পড়ে যান। পেছনে থাকা লোকজনের পক্ষে এ খাদ দেখা সম্ভব নয় বিধায় পেছনের লোকজনের ভিড়ের চাপে সামনের লোকজন নিচে পড়ে গেলে পদদলিত হয়ে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। পরে কমিউনিটি সেন্টারে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকরা আহত লোকজনকে উদ্ধার করে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনায় পদদলিত হয়ে ১০ জন মারা যান আর আহত হন ১৪ জন। এর মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুষ্ঠান চলাকালে দায়িত্বে থাকা মেজবান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, দুই সদস্য কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী ও দেবাশীষ গুহ বুলবুল, কনভেনশন সেন্টার ব্যবস্থাপনা কমিটির পাঁচজন, ২৭ জন পুলিশ সদস্য, ছয়জন আহত ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের পাঁচ ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয় তদন্ত কমিটি। প্রসঙ্গত, সোমবার নগরীর আসকারদীঘির পাড় এলাকার রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলিতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হন ১০ জন এবং আহত হন ৪০ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর