শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দ্বিমুখী নয়, এবার নির্বাচনী লড়াই হবে ত্রিমুখী

বাদল নূর

দ্বিমুখী নয়, এবার নির্বাচনী লড়াই হবে ত্রিমুখী

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, দ্বিমুখী নয়, এবার জাতীয় নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। তিনি বলেন, আমরা আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় নিয়ে যেতে চাই। এটা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের নতুন অধ্যায় রচনা করা প্রয়োজন। জনগণের জাগরণের মাধ্যমেই এ ধরনের বিপ্লব সাধন সম্ভব। বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির উত্থান ঘটিয়ে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে সেই শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ  করছি। অবস্থা বুঝে নির্বাচনে অংশ নেব। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও সেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এবার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বিমুখী নয়, ত্রিমুখী হবে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে তার দলীয় কার্যালয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতির জীবনে শ্রেষ্ঠ নীতি ও আদর্শ প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেই নীতি ও আদর্শে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে সমঝোতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসন নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ এই ভিশন নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখন যে নির্বাচনী ব্যবস্থা তা দিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সংখ্যানুপাত প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু রেখে নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে কাজ করছে কিনা তার ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন তারা সুষ্ঠু করতে পারবে কিনা। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দুই দলের ভিতরে দ্বন্দ্ব হলো যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় থাকা। দুই দলই আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের ওপরে নির্ভরশীল। পেশিশক্তি, টাকার খেলা, সাম্প্রদায়িক ধূম্রজাল সৃষ্টির মতো সমস্যার কথা তারা কখনো উচ্চারণ করে না। তারা ব্যস্ত কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা নিয়ে। সংবিধানে বলা আছে যে, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সংবিধানের এই নির্দেশনা তারা মানছে না। উভয় দলই চায় নির্বাচনকালীন সরকার তাদের দলের অনুকূলে কাজ করুক। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনে নির্বাচন কমিশনকে ষোল আনা নিশ্চয়তা দিতে হবে যে প্রতিটি নাগরিক প্রার্থী হওয়ার ও স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি শক্তি আরেকটি শক্তিকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত তাদের শান্তি নেই। এই দুটি দলের রাজনৈতিক বিরোধ যতটা না আদর্শের, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় থাকার লড়াইয়ে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দুই দলই মরিয়া হয়ে উঠছে। তাদের উদ্দেশ্য নীতি-আদর্শ প্রতিষ্ঠার বদলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা। মূলত এ দুই দলের দ্বন্দ্ব লুটপাটের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ চিত্রটা দেখলে বোঝা যাবে তাদের ভিতরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তা হলো এক গ্রুপের সঙ্গে আরেক গ্রুপের দ্বন্দ্ব, এক ভাইয়ের ক্যাডারদের সঙ্গে আরেক ভাইয়ের ক্যাডারদের দ্বন্দ্ব। লুটপাটের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে এ দুটি দলের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তার নিদর্শন আমরা দেখতে পাই ‘ভিশন ২০২১’ আর ‘ভিশন ২০৩০’ নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে নকল করার মধ্য দিয়ে। ভিশনের বিষয়ে একমত হলেও দ্বন্দ্ব ও সংঘাত তারা নিরসন করতে পারেনি। তারা উভয়েই সমাজতন্ত্র মতাদর্শের পথ থেকে সরে গিয়ে পুঁজিবাদী নীতি অবলম্বন করছে। তারা উভয়েই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিজেদের পক্ষে আনার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তাদের ভিতরের এই দ্বন্দ্ব যখন সংঘাত সমস্যার সৃষ্টি করে তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা এক হয়ে যায়। তারা কোনো বিকল্প শক্তির উত্থান ঘটতে দিচ্ছে না। এজন্য তারা উভয়েই একই ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে। তাদের ঐকমত্যের নিদর্শন আমরা দেখতে পাই যখন শুল্কমুক্ত গাড়িপ্রাপ্তির বিষয়ে বিল সংসদে অবাধে পাস হয় তখন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর