শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাফল্য জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটনে আলোচনায় গুম অপহরণ

আনিস রহমান


সাফল্য জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটনে আলোচনায় গুম অপহরণ

চলতি বছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষ্য ছিল জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা ছিল নিখোঁজ, গুম ও অপহরণের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা।

অপরাধমূলক ঘটনার দিক দিয়ে ২০১৭ সাল ছিল অন্য বছরের চেয়ে অন্যরকম। একের পর এক জঙ্গি হামলা, আতঙ্ক ও হত্যায় উদ্বেগ ছিল দেশে-বিদেশে। চলতি বছরে জঙ্গি হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নিহত এবং জঙ্গিদের আত্মঘাতী ছিল আলোচ্য বিষয়। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন মারা গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, চলতি বছর ছিল জঙ্গিবাদ নির্মূলের বছর।

জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালায়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালামে বর্ধমানবাড়ি এলাকার ‘কমলপ্রভা’য়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ’১৬, সিলেটের আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’, মৌলভীবাজারে ‘অপারেশন হিট ব্যাক’, আশকোনায় র‍্যাব ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা, খিলগাঁয় র‍্যাবের চেকপোস্টে হামলা, বিমানবন্দর গোল চত্বরে আত্মঘাতী হামলা, ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’, জাতীয় শোক দিবসে পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ, ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা গ্রামে দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান উল্লেখযোগ্য। এই অভিযানের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা।

পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ১৮টি অভিযানে মারা গেছে ২৬ জঙ্গি। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৬ জনকে। আর র‍্যাব সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৩০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য রয়েছেন ২৫৫ জন। এ সময় উদ্ধার করা হয় দুটি সুইসাইডাল বেল্ট, ১৮৬টি সার্কিট, চারটি বোমা তৈরির কন্টেইনার, ১৮টি নিওজেল স্টিক, একটি ইম্প্রোভাইজ ডিভাইস, সালফিউরিক অ্যাসিড, পাঁচ প্যাকেট স্প্লিন্টার বল, ১২টি পাওয়ার জেল ও বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই। অপরদিকে লোকমুখে আলোচনা ছিল একের পর এক নিখোঁজ, গুম, অপহরণের ঘটনা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক কেউই বাদ যাননি গুম তালিকা থেকে। ভিকটিমরা নিখোঁজ, গুম, নাকি অপহরণের শিকার এ নিয়েও চলেছে বিতর্ক। তালিকায় স্থান পাওয়া কেউ কেউ ইতিমধ্যে ফিরে এসেছেন নীরবে, কারও কারও ফেরা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তবে না ফেরার তালিকাটাই দীর্ঘ। এদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতা নিয়েও সন্তুষ্ট নন গুম বা অপহরণ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার।

বিদায়ী বছরে কোনো মাসে একজন আবার কোনো মাসে একাধিক ব্যক্তি গুম, অপহরণের শিকার হয়েছেন। এদের কাউকে তুলে নেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে, কেউ হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন স্বজনদের কাছ থেকে। এ সব নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন, রাজনীতির বিরোধীপক্ষ মাঝেমাঝে সরব হলেও আদতে তার তেমন প্রভাব পড়েনি। একটি ঘটনা ভুলতে বসার আগেই ঘটেছে আরেকটি ঘটনা। তবে বছরের শেষের দিকে এসে এসব অপহরণ বা গুমের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ২০৯টি। এর মধ্যে ১৬৭ জন পুরুষ, ৩১ জন নারী এবং ১১ জন শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। সংস্থাটির মতে, এই সময়ে নিখোঁজ হয়েছে ১১৬ জন নারী-পুরুষ। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, গত ১০ বছরে এ ধরনের ৫৪৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন যার মধ্যে ৩৯৫ জনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জন, যাদের ৩৮ জনের খোঁজ মেলেনি।

সর্বশেষ খবর