শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বকশীগঞ্জে নৌকা ডোবালেন এমপি

শফিক জামান, জামালপুর

বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহীনা আক্তারের শোচনীয় ভরাডুবি হয়েছে। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেননি। জয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন স্থানীয়  এমপি আবুল কালাম আজাদ সমর্থিত স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর। তার পক্ষে সরকারের একজন উচ্চপদস্থ  কর্মকর্তার আশীর্বাদও ছিল। বিএনপি প্রার্থী ফখরুজ্জামান মতিন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। তবে বেসরকারী ফলাফল বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বলছেন, বকশীগঞ্জে নৌকা ডুবেছে লোকাল এমপির অসহযোগিতা এবং পরোক্ষ ইন্ধনের কারণে।

নৌকার মর্যাদা রক্ষায় জেলা আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেও এই ভরাডুবি ঠেকাতে পারেননি। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দিনরাত বকশীগঞ্জে পড়ে থেকে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। তারপরও দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি ঠেকাতে পারেননি। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান লোকাল এমপি আবুল কালাম আজাদের আশীর্বাদপুষ্ট বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আশীর্বাদ ছিল এমনটাও দাবি করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এখানে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হলেও জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন স্থানীয় এমপি আবুল কালামের আশীর্বাদপুষ্ট বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ উপেক্ষা করে মনোনয়ন দেয় শাহীনা আক্তারকে। বকশীগঞ্জের মেয়ে হলেও বৈবাহিক সূত্রে তার শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়া এবং ব্যবসায়িক কারণে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার কারণে এলাকায় তিনি মোটেও পরিচিত ছিলেন না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে মনোনয়ন পাওয়ার পর। সাধারণ ভোটারদের কাছেও ছিলেন সম্পূর্ণরূপে একজন অপরিচিত মুখ।

বকশীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে নামে ৩ জন। জেলা আওয়ামী লীগ দুজনকে বহিষ্কার করলেও স্থানীয় এমপি সমর্থিত প্রার্থী যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম সওদাগরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে নজরুল ইসলাম সওদাগর ছিলেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৫ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপির হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক হন। এই পদটিও তিনি পেয়েছিলেন এমপির সুপারিশে সরাসরি কেন্দ্রীয় যুবলীগের অনুমোদনে। এই কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা যুবলীগের কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি। দলের প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামলেও স্থানীয় এমপির রহস্যজনক ভূমিকার কারণে কেন্দ্রীয় যুবলীগ তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু এমপি সমর্থিত যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামে।

এমপির আশীর্বাদপুষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগরের পক্ষে দলের সুবিধাভোগী বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী বুকে নৌকার ব্যাজ ধারণ করে ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন।

নির্বাচনে যখন জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন তখন দলীয় প্রার্থীর ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন স্থানীয় এমপির সমর্থকরা।

বকশীগঞ্জের ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর ৮ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী ফখরুজ্জামান মতিন পেয়েছেন ৭ হাজার ৫০৫ ভোট। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহীনা বেগম ৫ হাজার ১৬০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রয়েছে। তবে ওই কেন্দ্রের সব ভোট পেলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ স্থগিত কেন্দ্রে ১ হাজার ৫২৮ ভোট রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও নারী ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি। নারী ভোটাররা তাকে স্থানীয় নন বলে গ্রহণ করেননি।

 

সর্বশেষ খবর