শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গো য়ে ন্দা কা হি নী ১১৯

সালাম দিয়েই গুলি

মির্জা মেহেদী তমাল

সালাম দিয়েই গুলি

তোর সঙ্গে আর কে ছিল? কেন খুন করেছিস বল! গোয়েন্দা দফতরের ছোট্ট একটি রুমে জেরা করছেন গোয়েন্দারা।  চোখ বাঁধা ব্যক্তিটি মুখ খুলছে না। যতবার প্রশ্ন করা হচ্ছে, ততবারই, না। বিরক্ত গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন লোক তিনি আগে দেখেননি। পানি, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সব থেরাপি দেওয়া হলো, এর পরেও  কেন জবাব পাচ্ছে না! এই তুই কেন স্যারের বাসায় গিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিস! প্রশ্ন রাখে গোয়েন্দা। এবার মুখ  খোলে চোখ বাঁধা লোকটি। বলে, সত্য। আমি হুমকি দিছিলাম। কিন্তু খুন করিনি। ভয় দেখাচ্ছিলাম স্যার। চিন্তিত  গোয়েন্দা কর্মকর্তা। নিজের রুমে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। খুব ক্লান্ত। চোখ বন্ধ করে বিশ্রামের চেষ্টা। কিন্তু তার মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে স্কুলের স্যারকে খুন করল কে?

সরকারি গভ. ল্যাবরেটরি বয়েজ স্কুলের শিক্ষক স্বপন কুমার  গোস্বামী খুন হয়েছেন। বাসা থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হতেই অস্ত্রধারীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। ভূতেরগলি নর্থ রোডের এই ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০২ সালের অক্টোবরে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার বিষয়ে পুলিশ আসামি ধরতে বেপরোয়া হয়ে পড়ে। শিক্ষকের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর  থেকে ধরে নিয়ে আসে ইফনুস মেম্বারকে। জমি নিয়ে বিরোধে এই ইউনুস ঢাকায় এসে ওই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়। কদিন পর শিক্ষক খুন হলেই সন্দেহের তীর তখন ইউনুসের দিকে। সেই ইউনুসের কাছে টানা ১৮ ঘণ্টার জেরাতেও পুলিশ কোনো তথ্য পায় না। 

 গোয়েন্দারা তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ায়। গোয়েন্দারা খুনের ধরনে নিশ্চিত হয়, পেশাদার হিটম্যানের কাজ এটি। কিন্তু পেশাদার হিটম্যান কারা ব্যবহার করল? গোয়েন্দাদের মাথায় ঢোকে না। গোয়েন্দারা খবর পেয়েছে, শিক্ষকের বাসায় ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় কয়েকজন যুবক আসে। তারা প্রাইভেট পড়ার কথা বলেছে। কিন্তু তারা দেখতে ছাত্র মনে হয় না। এমন কথা শিক্ষক বলেছিলেন তার শ্যালককে। এমন সব চিন্তা নিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা যখন ভাবছিলেন, তখনই ফোন এলো। সোর্সের ফোন।

স্যার, জিল্লুরের কাছে নতুন লোহা লক্কড় (রিভলবার) আসছে। ওর গ্রুপের পোলাপানের পকেট ভর্তি মাল। ভালো কাম করছে একটা। খালাস করছে। এমন কথা শুনে  গোয়েন্দা কর্মকর্তা নড়েচড়ে বসে। ঠিকানা নেয়। রাতেই অভিযান জিল্লুরের আস্তানায়। পুলিশের ধাওয়ায় পালায় সব। ধরা পড়ে এক সদস্য রিফাত। গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে  জেরা। বেশি জোড়াজুড়ি করতে হয়নি। সব ফাঁস করে দেয়  সে। পুলিশ আর সময় নেয় না। রিফাতের দেওয়া তথ্যে অভিযান চলে। ধরা পড়ে শান্তনু আর আপন। এরা একই স্কুলের ছাত্র। শান্তনুর বাবা সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা।

এই দুই ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ খুনের তথ্য পায়। পুলিশ শুনে হতবাক।

পুলিশের জেরায় শান্তনু জানায়, স্যারকে হত্যা করতে   দেড়মাস আগে পরিকল্পনা করি। কারণ স্যার আমাকে নকলের দায়ে পরীক্ষা থেকে এক্সফেল করে। আর আপনকে স্কুল থেকে বের করে দেয়। আমরা আর সহ্য করতে পারছিলাম না।

শান্তনু বলে যায়, স্যারকে খুন করতে সন্ত্রাসী জিল্লুরের কাছে নিয়ে যাই। স্যারকে খুন করতে একলাখ টাকা দিতে চাই। কিন্তু ওরা আরো চায়। কারন অস্ত্র ভাড়া করতে টাকা লাগবে। তখন আমি বলি, আমার বাবা সরকারি কর্মকর্তা। উনার লাইসেন্স করা রিভলবার আছে। ওটা দিব। জিল্লু রাজি হয়। বাসা থেকে রিভলবার নিয়ে এসে দেই জিল্লুরের কাছে। এর কয়েকদিন পর কাজ হয়ে যায়।

জিল্লুর গ্রুপের সদস্য রিফাতের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, তারা শিক্ষকের বাসার কাছে আগে থেকে ওত পেতে থাকে। সকাল ৯টায় শিক্ষক বাসা থেকে বেরিয়েই একটা দোকানের সামনে দাঁড়ায়। উনি সিগারেট নিচ্ছিলেন। এ সময় তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। আমাদের দিকে তাকাতেই আমরা স্যারকে সালাম দেই। এরপরই গুলি চালাই। পরে ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যাই।

২০০৬ সালের অক্টোবরে বিচারিক আদালত দুজনের ফাঁসি এবং একজনের যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর