রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
জোটের আবদারে বিব্রত দুই দল

বিএনপির কাছে প্রত্যাশা দেড় শতাধিক

মাহমুদ আজহার

বিএনপির কাছে প্রত্যাশা দেড় শতাধিক

কাজী জাফর আহমদ মারা যাওয়ার পর জাতীয় পার্টির (জাফর গ্রুপ) নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোস্তফা জামাল হায়দার। দলটি এখনো নিবন্ধনহীন। মাঠপর্যায়েও নেই তেমন কোনো তত্পরতা। তবুও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ জন প্রার্থী দেওয়ার ইচ্ছা তাদের। বিএনপির কাছেও এ দলটির আবদার অন্তত ৫০টি আসন। মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, এখনো পর্যন্ত তার দলে ১১ জন সাবেক এমপি রয়েছেন। জোটগতভাবে প্রার্থী হলে এসব এমপি নির্বাচিত হয়ে আসবেন। দুঃসময়েও জোটের সঙ্গে রয়েছেন। তাই ৫০টি আসন চাওয়া অযৌক্তিক কিছু নয়। জোটের অন্য শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপ। সারা দেশে সাংগঠনিক বিস্তৃতি সেই অর্থে নেই। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় পিছিয়ে নেই তারাও। এ দলটি বিএনপি জোটের কাছে ৪০টি আসন চাইতে পারে বলে জানা গেছে। শুধু এ দলটিই নয়, জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতও ৫০টির মতো আসন চায় বিএনপির কাছে। এ নিয়ে তারাও দর কষাকষি করছে। যদিও দলটি ইতিমধ্যে নিবন্ধন হারিয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে কিংবা বিএনপির ব্যানারে তারাও লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছে।  জোটের কাছে এলডিপিও চায় অন্তত ২৫-৩০টি আসন। অন্য দলগুলোও ১৫টি থেকে শুরু করে ২টি করে আসন চাইবে। এ নিয়ে বিপাকে জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি। সব মিলিয়ে বিএনপির কাছে দেড় শতাধিক আসন চায় জোটের শরিক দলগুলো। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে— জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপির একাংশ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি),  লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি (একাংশ), বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই ১০টি দলের। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা অবশ্য জানান, জোটগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে গেলে অন্য শরিক দলগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৩০টি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াতকে ১৫ থেকে ২০টির মতো আসন দেওয়া হতে পারে। বাকিগুলো অন্য দলকে দেওয়া হবে। জোটের সব চাওয়া পূরণ করা সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিএনপি জোট এখন সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি নিয়ে মাঠে রয়েছে। ভোটে প্রার্থী দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনেকেরই অনেক চাওয়া থাকতে পারে। সব চাওয়া তো আর পূরণ করা সম্ভব নয়।’ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে এক নেতার এক দল ডেমোক্রেটিক লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মণি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনে বিশ্বাসী নয় এ দলটি। কাগুজে এ দলটির নেই নিজস্ব অফিসও। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দুটি আসন চাইবেন। ময়মনসিংহ-৮ আসনে (ঈশ্বরগঞ্জ) নিজেই লড়তে চান। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। এ দলের প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক (অব.)। তিনি চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানালেন, জোটের কাছে ১২টি আসন চাইবে তার দল। এর মধ্যে তার দলের সাধারণ সম্পাদক এম আমিনুর রহমান পাবনার সাঁথিয়া থেকে লড়বে। কুমিল্লা সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারসহ আরও বেশ কয়েকটি আসনে তার দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। জোটের শরিক দল এলডিপি। এ দলে অন্তত সাতজন সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে লড়তে ২৫-৩০ জন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, এলডিপিতে সাবেক মন্ত্রীই রয়েছেন অন্তত সাতজন। এ ছাড়া আরও অনেক তরুণ নেতৃত্ব রয়েছে যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। তিনি নিজেও লক্ষ্মীপুর-১ থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এনপিপির (একাংশের) নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নিলু দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এখন তার দল নিবন্ধনবঞ্চিত। তবুও আগামী নির্বাচনে সাতজন প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ফরহাদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে জানিয়েছেন, যোগ্যদের অবশ্যই মনোনয়ন দেওয়া হবে।  জোটবদ্ধ নির্বাচন প্রসঙ্গে এনডিপির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও  জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর