রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নজিরবিহীন চলতি দায়িত্ব দিয়েই চলছে এনবিআর

রুহুল আমিন রাসেল

নজিরবিহীন চলতি দায়িত্বে চলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড— এনবিআর। সংস্থাটির সদস্য, কমিশনার থেকে শুরু করে উপ-কমিশনার পর্যন্ত বিভিন্ন পদে বছরের পর বছর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, সারা দেশের রাজস্ব প্রশাসনে নিয়মিত পদোন্নতি না দেওয়া এবং দক্ষ কর্মকর্তাদের কার্যত কর্মহীন করে রাখায় সর্বত্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। কার্যত রাজস্ব প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। রাজস্ব আদায়ের এই প্রধান প্রতিষ্ঠানটির হ-য-ব-র-ল অবস্থা, এবার নির্বাচনের বছরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন সংকটে ফেলতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, চার বছর যাবৎ আয়কর বিভাগে সদস্য হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন এনবিআর সদস্য আবদুর রাজ্জাক। তিনি আর দেড় মাস পর অবসরে যাবেন। তার মতো দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন মীর মোস্তাক আলী ও জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া সম্প্রতি সময়ে সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়া কানন কুমার রায় ও হাবিবুর রহমান আখন্দও চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ দুই বছর ধরে শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে সদস্য হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন এ এফ এম শাহরিয়ার মোল্লা। কয়েক মাস আগে সদস্য হিসেবে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয় লুত্ফর রহমানকে। তবে কেবল মাত্র সদস্য পর্যায়েই নয়, চলতি দায়িত্বে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের প্রধান সংগঠক কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তারাও। এ ছাড়াও অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম-কমিশনার, উপ-কমিশনার পর্যায়ের পদগুলোতেও  কয়েকশ কর্মকর্তা চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন চলতি দায়িত্ব পালনকারী অনেক দক্ষ কর্মকর্তা পদোন্নতি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গতকাল বলেন, চলতি দায়িত্ব তিন থেকে ৬ মাসের বেশি রাখা রাজস্ব প্রশাসনের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। কিন্তু মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর কাউকে চলতি দায়িত্বে রাখা যোগ্য কর্মকর্তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এতে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া নেতিবাচক হতে বাধ্য।  জানা গেছে, দীর্ঘ তিন বছর ধরে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাটের কমিশনার মো. মাহবুবজ্জামান। তার ব্যাচের সহকর্মীরা নিয়মিত কমিশনারের দায়িত্ব পালন করলেও রহস্যজনকভাবে চলতি দায়িত্ব থেকে নিয়মিত হতে পারেননি মো. মাহবুবজ্জামান। তার মতো এমন আরও ভুক্তভোগী হলেন— পানগাঁও কাস্টম হাউসের কমিশনার মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর, যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন, রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী, শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যার্পণ পরিদফতরের মহাপরিচালক বেগম ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী। জানা গেছে, এনবিআরের আয়কর বিভাগের ৪০টি কমিশনার পদের মধ্যে ৩৪টিতেই চলতি দায়িত্ব পালন করছেন কর্মকর্তারা। এরা হলেন— ঢাকার কর অঞ্চল-৮ কর কমিশনার মোহাম্মদ আবু তাহের চৌধুরী, কর অঞ্চল-৯ বেগম আতিয়ান নাহার, কর অঞ্চল-১০ অপূর্ব কান্তি দাস, কর অঞ্চল-১১ বেগম হুমায়ারা সাইদা, কর অঞ্চল-১৪ মো. জামাল আহমেদ, কর অঞ্চল-১৫ এর বেগম মাহবুবা হোসেইন। চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-৩ কর কমিশনার মো. মোতাহের হোসেন, কর অঞ্চল-৪ আহাম্মদ উল্যাহ, খুলনা কর অঞ্চলের কর কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন, রাজশাহী কর অঞ্চলের খন্দকার মো. ফেরদৌস আলম, রংপুরের কর অঞ্চলের মো. হারুন-অব-রশীদ, সিলেটের কর অঞ্চলের সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ, বরিশাল কর অঞ্চলের মোহাম্মদ জাহিদ হাছান, গাজীপুর কর অঞ্চলের বেগম সুলতানা আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চলের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, কুমিল্লা কর অঞ্চলের সামস উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ কর অঞ্চলের জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ এবং বগুড়া কর অঞ্চলের কর কমিশনার এ কে এম বদিউল আলম। এ ছাড়াও ঢাকা কর আপিল অঞ্চল-২ চলতি দায়িত্বে আছেন কাজী ইমদাদুল হক, কর আপিল অঞ্চল-৩ ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া, কর আপিল অঞ্চল-৪ এম এম ফজলুল হক এবং চট্টগ্রামের কর আপিল অঞ্চলের মো. নাজমুল করিম। তাদের সঙ্গে আরও চলতি দায়িত্বে আছেন— কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চলের কর কমিশনার সানজিদা খাতুন, কর পরিদর্শন পরিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন এবং বিসিএস কর একাডেমির মহাপরিচালক বজলুল কবির ভূঞা।

সর্বশেষ খবর