রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রচারণায় মাঠে নামবেন প্রধানমন্ত্রী

৫ জানুয়ারির ভোট ভোটারবিহীন নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে মহানগর ও জেলা শহরে জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেটে জনসভা করে শুরু হবে নির্বাচনী প্রচারণা। এরপর রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও কক্সবাজারে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

গত রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের নেতাদের এমন মনোভাব জানিয়েছেন তিনি। এজন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে রংপুর সিটি নির্বাচনের পরাজয়ের ব্যবধান বেশি হওয়ায় এ থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী সিটিতে যেন এরকম ঘটনা না ঘটে সেজন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন দলীয় নেতাদের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে একজনকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটনকে আগেই কাজ করতে বলা হয়েছে বলেও জানান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুখ দেখে নয়, জরিপ দেখেই প্রার্থী দেওয়া হবে। এমপিদের প্রতি শুক্র ও শনিবার নির্বাচনী এলাকায় থেকে গণসংযোগ করতে হবে। সরকারের উন্নয়নগুলো প্রচার করতে হবে।’ কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে দলীয় সভানেত্রী বলেন, ‘নৌকার পক্ষে ভোট বাড়াতে মাঠে থাকেন। ব্যক্তির পক্ষে যেন কেউ প্রচারণা না চালায় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নৌকার পক্ষে ভোট বাড়াতে সরকারের উন্নয়নগুলো প্রচার করতে হবে।’ সূত্র জানায়, নির্বাচনী সফরের অংশ হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নেতৃত্বে ১২টি টিম গঠন করা হয়। ওই টিমে কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও স্থানীয় এমপিদের রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ওই টিমের সদস্যরা এলাকা পরিবর্তন করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন। বৈঠক সূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘নেত্রী সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আগে থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত না হলে পরে জয়লাভ করায় সমস্যা দেখা দেয়।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো রাজশাহীতে লিটন ও সিলেটে কামরানকে প্রস্তুতি নিতেই বলেছি। অন্য সিটিতেও খোঁজখবর নিচ্ছি। নির্বাচনের আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’ তখন এ দুজন তাদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ সময় ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মহিলাদের মাঠে নামানোর পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

৫ জানুয়ারির ভোট ভোটারবিহীন নয় : সূচনা বক্তব্যে দশম সংসদ নির্বাচনকে ভোটারবিহীন বলে বিএনপির সমালোচনাকে নাকচ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৫ জানুয়ারির ভোট ভোটারবিহীন নয়। ওই নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল আর জনগণের সমর্থন আছে বলেই সরকার চার বছর পূর্ণ করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোট ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগ করেছেন। স্কুল পুড়িয়েছেন। প্রিসাইডি অফিসার হত্যা করেছেন। তার পরও জনগণ রুখে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই আমরা চার বছর পূর্ণ করতে পারলাম।’ তিনি বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন বলেই ক্ষমতা পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারেননি। এরশাদ ’৮৮ সালে নির্বাচন করে ’৯০ সালে তার পতন হয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন করে খালেদা জিয়া তো দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় আমার নামে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। ওসব নোটিস জীবনে অনেক দেখেছি। সময়মতো জবাব দেওয়া হবে। সাহস থাকলে যারা তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, বিদেশি গণমাধ্যম— তাদের কাছে প্রতিবাদ পাঠাক, তাদের নামে নোটিস পাঠাক। তা তো পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নামে পদ্মা সেতুর নির্মাণের সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আজকে কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতুতে কেনো দুর্নীতি হয়নি।’

বিএনপি বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত দাবি করলেও শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য ছিল। খালেদা জিয়া চেয়েছিল এ দেশে যেন গণতান্ত্রিক ধারা না থাকে।’ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভোট ছাড়াই রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের কোন ভোটে ক্ষমতায় এসেছিল, যে বিএনপি গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে? কোন গণতন্ত্রে বিএনপির জন্ম? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যাদের জন্ম তাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায় কীভাবে?’ খালেদা জিয়ার টুইট বার্তার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা টুইট করেছেন আওয়ামী লীগ বুলেটে বিশ্বাস করে, তিনি ব্যালটে বিশ্বাস করেন। আমি ’৮১ সালে দেশে ফিরে বলেছিলাম, ক্ষমতা বদল হবে বুলেটে নয়, ব্যালটে। বুলেটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছেন জিয়া, তার স্ত্রী তার থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেশ বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন।’ এই টুইট বার্তা খালেদা জিয়ার নামে এলেও এটা তার লেখা কিনা, এ নিয়েও সন্দিহান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জানি না টুইট উনি নিজে লিখেছেন কিনা, নাকি কাউকে দিয়ে করিয়েছেন জানি না।’

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ও তার ছেলে বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তার স্বামী আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছেন। ভাইবোনকে হত্যা করেছেন। এখন তিনিও চেষ্টা করছেন আমাকে হত্যা করতে।’ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগই সবসময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছে— সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সভানেত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে মানুষের কল্যাণে বিশ্বাস করে। নেতা-কর্মীরা অনেক জেলজুলুম সহ্য করেছে। মিথ্যা মামলা আমাদের ওপরও কম হয়নি।’

সর্বশেষ খবর