মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
আ ই ন আ দা ল ত

দলিল দাখিলের নির্দেশ পেয়েই পলাতক প্রতারক জয়নাল গনি

আরাফাত মুন্না ও তুহিন হাওলাদার

দলিল দাখিলের নির্দেশ পেয়েই পলাতক প্রতারক জয়নাল গনি

শেখ মো. জয়নাল আবেদীন ও শেখ মো. আবদুল গনি। সম্পর্কে পিতা-পুত্র। রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ার ২২ তলা একটি ভবনের জমি নিজেদের দাবি করে ২০০৯ সালে তারা মামলা ঠুকে দেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারও শুরু করেন বিচারক। শুনানির একপর্যায়ে জমির মূল দলিল দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত। তখন বাদীপক্ষ আরজি সংশোধনের জন্য মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করে। বিচারক সাত দিনের মধ্যে পুনরায় দাখিলের শর্তে মামলাটি ফেরত দেন। এর পর থেকেই জয়নাল ও গনি লাপাত্তা। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। গত ২ জানুয়ারি আশুলিয়ার আউকপাড়ার একটি জমির বণ্টন নিয়ে একই আদালতে মামলা করেন মো. বাসের আলী (নম্বর ১১/২০১৮)। এ মামলা দায়েরের পর সামনে আসে জয়নাল ও গনির প্রতারণা। মামলার আরজিতে বাসের আলীর উল্লেখ করা দলিল নম্বর ও জয়নাল-গনিদের আরজিতে উল্লেখ করা দলিল নম্বর একই। এভাবে দলিল জালিয়াতি যেন রাজধানীবাসীর জন্য নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জালিয়াতরা অন্যের জমি নিজের দাবি করে আদালতে মামলা করছে। আবার কখনো জমির জাল দলিল তৈরি করে ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে। পরে প্রতারক চক্রের ঋণের বোঝা চাপছে জমিমালিকের কাঁধে। আইনজ্ঞরা এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। বলছেন, নইলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে না। মামলার নথি থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বাসের আলী তার মামলার আরজিতে দলিল নম্বর ৬৫৯, বুক নম্বর ১, ভলিউম নম্বর ৮ ও পৃষ্ঠা নম্বর ১৪৬-১৪৯ উল্লেখ করেছেন। এর আগে ২০০৯ সালে প্রতারক শেখ মো. জয়নাল আবেদীন ও শেখ মো. আবদুল গনির করা মামলার আরজিতেও দলিল নম্বর ৬৫৯, বুক নম্বর ১, ভলিউম নম্বর ৮ উল্লেখ আছে। তবে বাসের আলী পৃষ্ঠা নম্বর ১৪৬-১৪৯ উল্লেখ করলেও এখানে পৃষ্ঠা নম্বর ১৪৬-১৪৮। এরই মধ্যে জয়নাল আবেদীন ও আবদুল গনি মামলা প্রত্যাহার করে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় আসল দলিল চিনতে কষ্ট হবে না বিচারকের। জানা গেছে, পাইকপাড়ার মুন গ্রুপের সানমুন স্টার প্লাজার ২২ তলা ভবনসহ জমি হাতিয়ে নিতে এই জয়নাল-গনি চক্রটি জাল দলিল তৈরি করে ২০০৯ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে মামলা করে (নম্বর ৮০৫/২০০৯)। জমির মূল দলিল আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলে প্রতারক চক্রটি সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে আরজি সংশোধনের কথা বলে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন তারা। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৯ নভেম্বর পুনরায় দাখিলের শর্তে মামলাটি ফেরত দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে আরজি সংশোধন করে মামলাটি পুনরায় দাখিল করতেও বলা হয়। মামলা প্রত্যাহারের জন্য চক্রটিকে ২ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। আদেশে বলা হয়, সাত দিনের মধ্যে আরজি সংশোধন করে পুনরায় দাখিল না করলে মামলাটি সরাসরি খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু চক্রটি মামলা প্রত্যাহার করেই লাপাত্তা। এক মাসের বেশি সময় পার হলেও তারা আদালতে কোনো আরজি দাখিল করেননি। জরিমানার টাকাও পরিশোধ করেননি। ইতিমধ্যে জয়নাল-গনির দাখিল করা মামলা খারিজও করে দিয়েছে আদালত। সূত্র জানায়, পিতা-পুত্র জয়নাল আবেদীন ও আবদুল গনির দাখিল করা দলিলটি ভুয়া ও জাল। এ দলিলটি ভুয়া উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবরেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম একটি প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেন, ‘আবদুল গনি কর্তৃক দাখিল করা আবেদনে (দলিল নম্বর ৬৫৯, তারিখ ১১.০৩.১৯৬৭) তল্লাশি কিংবা পরিদর্শনের জন্য দরখাস্ত ফরমে মন্তব্যের কলামে যে মন্তব্য রয়েছে, ওই মন্তব্যের নিচে থাকা স্বাক্ষরের সঙ্গে আমার স্বাক্ষরের আংশিক মিল রয়েছে। তবে ওই স্বাক্ষরটি আমার নয়। আমার স্বাক্ষর নকল করে আবেদনকারী আবদুল গনি জাল ডকুমেন্ট তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে জাল দলিল তৈরির চক্রটিকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব প্রতারককে দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। আদালতে এসব ভুয়া মামলা হবে না, ফলে মামলাজটও কমবে।’

সর্বশেষ খবর