শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেসিকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে দুদকের অন্য একটি টিম এবি ব্যাংকের পরিচালক বি বি সাহা রায় ও ওই ব্যাংকের হিসাবধারী ব্যবসায়ী সাইফুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ দুজনকে ২০ মিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে গতকাল দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে দুদক কার্যালয়ে আসেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। পরে তিনি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে প্রবেশ করেন। তাকে টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বেসিক ব্যাংকের মামলা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে মামলা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে এ রিপোর্টই যথেষ্ট নয়। তবে এ রিপোর্টটি আমরা আমলে নিয়েছি। চার্জশিট কবে, কখন হবে তা তদন্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আমি বলতে পারব না।’

দুদক সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বর আবদুল হাই বাচ্চুকে তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের সময় চেয়ে দুদকের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন তিনি। এর আগে ৪ ডিসেম্বর আবদুল হাই বাচ্চুকে প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এরপর ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো তাকে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন বাচ্চু। তবে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। গতকাল বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের করা ৫৬টি মামলার বিষয়ে বাচ্চুকে দুদকের পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আগের দুই দফায় ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টির বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাকি মামলাগুলোর বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। এর আগে ব্যাংকটির সাবেক ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি ও দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেফতার ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩, মো. সেলিম ৮ ও বরখাস্ত ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫ মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে মোট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর এই ব্যাংক নিয়ে তদন্তে নামে দুদক। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর পদত্যাগ করেন তিনি। এবি ব্যাংক নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ : পরিচালক বি বি সাহা রায়কে ব্যাংকটির ১৬ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে অবহিত করে বলা হয়— সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে এ বিষয়ে কী জানেন? ১৬ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা? অভিযোগের বিষয়ে তিনি দুদককে বলেছেন, পিজিএফ নামে দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ২০ মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা শুনেছেন। ওই কোম্পানির কোনো কর্মকর্তার নাম বা পরিচয় কাগজপত্রে তিনি জানাতে পারেননি। বরং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই টাকা ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেছে বলেও তিনি শুনেছেন বলে দুদকে জানিয়েছেন। তিন কিস্তিতে ওই টাকা দুবাই যাওয়ার পর ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে খুররাম ও আবদুস সামাদ নামে দুই ব্যক্তি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও তিনি শুনেছেন বলে দুদকে স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া দুদকের অনুসন্ধান টিম ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার একাধিকবার দুবাই যাতায়াতের প্রমাণ পেয়েছে। ২১ ডিসেম্বর এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও পরিচালক ব্যারিস্টার ফাহিমুল হক পদত্যাগ করেন। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তারা পদত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর