মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরকারদলীয় এমপিদের সম্পদ নিয়ে কাজ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারদলীয় এমপিদের সম্পদ নিয়ে কাজ চলছে

কেবল বিরোধী দল নয়, সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব নিয়েও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যারা সরকারি দলের সংসদ সদস্য, তাদের সম্পত্তির হিসাব নিয়েও দুদক কাজ করছে। গতকাল দুপুরে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।’ তিনি বলেন, ‘দুদকের ভূমিকা একটাই। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, তাদের সম্পত্তির সঠিক হিসাব দিতে হবে। আমরা কয়েকজন সংসদ সদস্যের সম্পত্তির সঠিক হিসাব পাইনি। যারা জনগণের প্রতিনিধি হবেন, তারা সঠিকভাবে নির্বাচন কমিশনে সম্পত্তির হিসাব  দেবেন।’ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুদক কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, না। আমাদের চোখের সামনে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেবে দুদক। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে এক-দুজন সংসদ সদস্যের বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সেটি নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের স্ত্রীরাও আসামি হয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, এমন প্রায় ১০টি মামলা আছে, যেখানে অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রীরাও আসামি। তবে স্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা দাবি করেন, তারা কিছুই জানেন না। এটি আসলে একটি সামাজিক ব্যাধি। এর প্রতিরোধে আমরা ক্যাম্পেইন করব।  যেন স্ত্রীদের নামে কোনো অবৈধ সম্পত্তি রাখা না যায়। দুদক  চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে  কেলেঙ্কারি বাড়ছে-এ কথা  ঠিক নয়। কেলেঙ্কারি বাড়ছে না বরং কমছে। আমার ধারণা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন শুরু হয়েছে। প্রাইভেট ব্যাংকিং সেক্টরে কেলেঙ্কারি বাড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন অব্যাহত থাকবে। ব্যাংকের বোর্ডগুলো ভালোভাবে কাজ করছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। কারণ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি। এ খাতে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।  যেখানে নিয়ম থাকে সেখানে কিছু অনিয়ম তো থাকেই। সে জন্যই তো আমাদের মতো সংস্থা। সরকারি বড় বড় প্রজেক্টে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের সহযোগিতা প্রসঙ্গে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা সরকারকে বলেছিলাম বড় বড় প্রজেক্টে যদি তারা মনে করেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাহায্য দরকার তাহলে আমরা তা করব। এমনকি  কেবিনেট ডিভিশনকেও বলেছিলাম যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমাদের সাহায্যের জন্য। তবে আমরা আসলে এ বিষয়ে  তেমন কোনো রেসপন্স পাইনি। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই করছি। আমরা লক্ষ্য রাখছি। দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়টা চলমান। সরকার চেষ্টা করছে। দুর্নীতি হওয়ার আগেই যাতে দুর্নীতি বন্ধ ও প্রতিরোধ করা যায়, এটা বুঝতেও সময় লাগে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পদের সঠিক হিসাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুদক  চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের ভূমিকা একটাই— আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা হলফনামা সঠিকভাবে দেবেন। ইতিমধ্যে দু-একজন সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আমরা ইলেকশন কমিশনে লিখেছি, তাদের সম্পদ বিবরণী সঠিক নয়। যারা জনগণের প্রতিনিধি হবেন, জনগণ জানুক তারা সঠিকভাবে নির্বাচন কমিশনে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। ২০১৮ সালে দুদকের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি প্রায় ২৫টি  সেক্টরে অপচয়-দুর্নীতি বন্ধ করতে আমরা ব্যবস্থা নেব এবং দৃশ্যমান কিছু কাজ করার চেষ্টা করব। যাতে সবাই বুঝতে পারে— দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু একটা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাঁচ বছর কর্মপরিকল্পনার দ্বিতীয় বছর শুরু হয়েছে। আপনারা জানেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চীন-জাপানসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ২৭ কোটি জনশক্তি লাগবে। এ জন্য জনশক্তি শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতির কোনো প্রভাব যাতে না পড়ে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বছর চেষ্টা করব প্রকৌশলী সংস্থাগুলোতে যাতে টেন্ডার ও ক্রয়-বিক্রয়ে অনিয়ম না হয়, সরকারি অর্থ অপচয় না হয়। এসব বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রকৌশলীদের সঙ্গে সভা করব। কারণ সরকারের বাজেটের সিংহভাগই যায় প্রকৌশলীদের মাধ্যমে। আমরা চাচ্ছি জনগণের অর্থ সঠিকভাবে যেন ব্যয় হয়। যাতে কোনো দুর্নীতি না হয়।

সর্বশেষ খবর