শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার করুন

বিশেষ আদালতে বললেন আইনজীবী ক্যামেরা ট্রায়ালের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার করুন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল আদালতে হাজিরা দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্কের জন্য আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নবম দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান পরবর্তী এই তারিখ নির্ধারণ করেন।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হন এবং দুই মামলায় হাজিরা দেন। বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন।

এর আগে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার চান, ন্যায়বিচার করুন।’ তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার সব সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে তিনি দেখেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই দুর্নীতি দমন কমিশন প্রমাণ করতে পারেনি। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারলে এর সুবিধা পাবেন আসামি।

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। বেগম জিয়া এ মামলায় পুরোপুরি খালাস পাওয়ার ‘হকদার’। তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণে তিনি পুরোপুরি নির্দোষ। খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই এ মামলাটি করা হয়েছে।

জমিরউদ্দিন সরকার আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসনের আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনান। ‘বেগম খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের এমন বক্তব্য আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ কি না, সে বিষয়টি উল্লেখপূর্বক আদালতের নজরে আনেন জমিরউদ্দিন সরকার। তিনি তার বক্তব্যে বার বারই আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন। এ ছাড়া ‘ওয়ান-ইলেভেন’কে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত করতেই এসব মামলা দেওয়া হয়েছে। আগের দিন তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদকে এসব মিথ্যা মামলার রূপকার বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘মাইনাস-টু থিওরি’ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই মইন উ আহমেদ এসব মিথ্যা মামলা করিয়েছিলেন। বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ মামলার অভিযোগের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যেই এ মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও নেই। মিথ্যা ও জাল নথি তৈরি করে ঘষামাজা অবস্থায় তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। অতএব এ মামলায় সম্পূর্ণভাবে খালাস পাওয়ার যোগ্য বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এই মিথ্যা মামলা করার জন্য বার বার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদকে দায়ী করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি করে দুদক।

খালেদা জিয়ার মামলার বিচার হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়ালে : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচার করা হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে, পাবলিক ট্রায়ালে নয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গতকাল রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল নবম দিনের মতো খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। মধ্যাহ্ন বিরতির পর যুক্তিতর্ক শুরু করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বেলা আড়াইটার দিকে ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুটি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরবর্তী দিন ধার্য করে আদালত।

ব্যারিস্টার মওদুদ অভিযোগ করে বলেন, আদালতে আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার মামলার বিচার পাবলিক ট্রায়ালে হচ্ছে বলে মনে করি না। জনগণের উপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে না, হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়াল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটিকে ‘বানোয়াট’ মামলা আখ্যা দিয়ে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ। এটা ফৌজদারি মামলার আবরণে রাজনৈতিক মামলা। ক্যামেরা ট্রায়াল করার জন্য খালেদা জিয়ার আরও ১৪টি মামলা এখানকার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুদক মূল নথি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে এই নথি তৈরি করা হয়েছে, যা ভয়াবহ ফৌজদারি অপরাধ। জালিয়াতি নিয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক নজির পড়ে শোনান মওদুদ। এ সময় আদালত নিশ্চয় জালিয়াতকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মওদুদ আহমদ বলেন, কুয়েতের আমির প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে খুব ভালোবাসতেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান কুয়েতের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতিমদের জন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কুয়েতের আমির টাকা দেন। এই টাকা সরকারের কোনো টাকা না। নথিপত্রের কোথাও কোনো জায়গায় বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষরও নেই। অতএব, বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ। এরপর আর এই মামলা এগোনোর কথা নয়।

মওদুদ আহমদ আরও বলেন, বাবা-মায়ের নামে করা ট্রাস্টের টাকা কেউ আত্মসাৎ করতে পারে, এ কথা বাংলাদেশের কোনো সুস্থ মানুষ বিশ্বাস করে না। আদালতের ওপর যদি রাজনৈতিক প্রভাব না থাকত তাহলে আরও আগেই বেগম খালেদা জিয়ার এই মামলা খারিজ করে দিতে পারত আদালত।

তিনি আরও বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ তো দূরের কথা, সেই ২ কোটি টাকা বেড়ে এখন ৬ কোটি টাকা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে দুদক। মওদুদ আহমদ আদালতকে অবহিত করে বলেন, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে দুদক থেকে চাকরি হারান এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। পরে তিনি মইনউদ্দিন ও ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকারকে ধরে চাকরিতে ফেরেন। এর ফলে তার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল। অথচ তাকে দিয়েই মামলার তদন্ত করানো হলো।

সর্বশেষ খবর