বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সংসদে ঋণ খেলাপি তালিকা

৬৫ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিগত ১০ বছরে ৮ হাজার ৭৯১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হয়নি। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে রক্ষিত ঋণতথ্যের ভিত্তিতে তিনি সংসদে এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে তিনি সংসদে ১ হাজার ৯৫৬ শীর্ষ ঋণখেলাপির নাম সংবলিত তালিকা প্রকাশ করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে তিনি বেসিক, সোনালী, ফারমার্সসহ বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকের ব্যাপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বর্ণনা করেন। এ সময় তিনি জানান, বর্তমান সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের অর্থ পাচারের ঘটনা ভোলেনি।

খেলাপি ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা : অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে, ১০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নেওয়া খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকায় প্রথম ২০টির মধ্যে রয়েছে— মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লি., মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লি., কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লি., ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি., আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, চৌধুরী নিটওয়ারস লি., সিদ্দিক ট্রেডার্স, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, আলাপ্পা কম্পোজিট টাওয়ালস লি., লিজেন্ড হোল্ডিংস, হলমার্ক ফ্যাশন লি., মুন্নু ফেব্রিক্স লি., ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স লি., শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়ালস লি., কেয়া ইয়ার্ন মিলস লি., সালেহ কার্পেট মিলস লি., ফেয়ার ইয়ার্ন প্রোসেসিং লি., হেল্পিং রিসোর্স লি., বিসমিল্লাহ টাওয়ালস লি.।

একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী তার জবাবে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া ৯১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঋণের পরিমাণ, ঋণ গ্রহীতা ৮ হাজার ৭৯১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়নি এমন এক হাজার ৯৫৬ জন খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করেন।

এত সহজে উত্তরণ হবে না : সানজিদা খানমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ খেলাপি বা অনিয়মে জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন। অনেকে জেলে আছেন। আরও অনেকের বিচার চলছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমি কয়েক দিন আগেও সংসদে বলেছি— ব্যাংক ব্যবস্থায় এখনো কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি। তবে এত সহজে উত্তরণ হবে না। এ জন্য একটু সময় লাগবে। এ পর্যায়ে একই দলের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তাদের সহযোগীরা বহু অনাচার করে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে সব সময়ই মামলাগুলো প্রলম্বিত করার একটা চেষ্টা চলে। আর আমাদের আইন ব্যবস্থা সহজ বিধায় তা সম্ভবও হয়। তবে সরকার তাদের দুর্নীতি-অর্থ পাচারের কথা ভোলে নাই।

আয়কর আহরণ সরকারি দলের ইসরাফিল আলমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৪ বছরে আয়কর আহরণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময় রাজস্ব আহরণ ৬৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সালের জুনে আয়কর আহরণ হয়েছিল ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৩ সালে দেশে রেজিস্টার্ড করদাতার সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ লাখ, এই সংখ্যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখে। শুধু করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধিই নয়, করদাতাদের কর প্রদানের সক্ষমতার হারও বেড়েছে। আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি পর্যায়ে প্রদেয় আমদানি শুল্ক প্রদানের সক্ষমতা বেড়েছে। ২০১৩ সালের জুন মাসে আমদানি শুল্ক ও মূসক আহরণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩২ হাজার ৩১৩ কোটি ও ৩৯ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫৪ হাজার ৩৩০ কোটি ও ৬৬ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর