বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সহায়ক সরকারের কোনো বিধান নেই : প্রধানমন্ত্রী

পুলিশের ওপর হামলা সহ্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোনো দিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। আর এজন্যই বর্তমানে তারা অসাংবিধানিকভাবে জাতীয় নির্বাচনের সময় সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সবসময় সমুন্নত রাখবে, সেজন্য সংবিধান পরিপন্থী কোনো সরকারব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব না। আর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠনের বিধান নেই। বিএনপি জন্ম নিয়েছে মার্শাল ল জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করার মাধ্যমে অবৈধ পথে, তাই অবৈধ দাবি করাটা তাদের অভ্যাস। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছিলাম। তার মানে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে এবং সরকারের পরিসর ছোট করা হবে। সরকার নির্বাচনকালীন শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে, কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় তানভীর ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে ভোটারবিহীন গণভোট (হ্যাঁ/না ভোট) করেছিল বিএনপি এবং সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং সরকার গঠন করেন। পরে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তার ওসব কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে মাগুরা ও ঢাকার উপনির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি করেছিল এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে অবৈধ সরকার গঠন করে বিএনপি। গণআন্দোলনের মুখে মাত্র দেড় মাসের মাথায় তাদের পতন ঘটে। ওই সময় বিএনপি নির্বাচনব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্পষ্ট রূপরেখা থাকা সত্ত্বেও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করে। সংসদ নেতা বলেন, বিএনপির নির্বাচনের নামে প্রহসন করার উদ্দেশ্য থাকায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয় এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। এসব ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিএনপি কোনো দিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। আর এজন্যই বর্তমানে তারা অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি দেখা যাবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন অবসরসীমা বাড়ানো হয়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর করা হয়। তিনি বলেন, যদি অবসরের বয়সসীমা শুধু বাড়ানোই হয় তবে নিচের স্তরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে এবং নতুনদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ অনেক হ্রাস পায়। তাই যত বেশি অবসরের বয়স বাড়ানো হবে তত চাকরিতে প্রবেশ কমে যাবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট ছিল, এখন তেমন সেশনজট নেই। ফলে চাকরিতে প্রবেশের জন্য এখন অনেক সময় পাচ্ছে। তাই এখন আর অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। সরকারদলীয় সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, দেশের ভিতরে বিনিয়োগের জন্য সব সুযোগ-সুবিধাই নিশ্চিত করেছে সরকার। কিন্তু দেশে বিনিয়োগ না করে যারা টাকা পাচার করতে চায় তারা তো তা করতেই চাইবে। কিন্তু টাকা পাচার করলে আমরা তা শনাক্ত করে দেশে ফেরত আনছি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচারকৃত অর্থ আমরা দেশে ফেরত এনেছি। অন্য যারা অর্থ পাচার করছে তা শনাক্ত এবং তা দেশে ফেরত আনতে সরকার যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।

পুলিশকে হামলা সহ্য করা হবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের ওপর বিএনপি কর্মীদের হামলাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা সহ্য করা হবে না। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ ধরনের জঘন্য ঘটনা আমরা কখনো সহ্য করব না। নতুন আইজিপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস-মাদক, জঙ্গিবাদ নির্মূল, সবকিছুই চলবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাক— সেটাই আমরা চাচ্ছি। উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে। এ ক্ষেত্রে দেশবাসীরও সহযোগিতা কামনা করেন সরকারপ্রধান। গত রাতে গণভবনে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গতকালও একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এ রকম জঘন্য ঘটনা আমরা দেখিনি।’

বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আাাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর