মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আদালতের দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা দূর করতে চান আইনজীবীরা

অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া

আরাফাত মুন্না

আদালতের দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা দূর করতে চান আইনজীবীরা

নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের তুলে ধরা দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র আদালতপাড়া থেকে দূর হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। বিচারপতি ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায় বলেও মন্তব্য তাদের। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলেন, নতুন প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত সৎ ও একনিষ্ঠ। তিনি দীর্ঘদিন বিচারাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে।

এর আগে রবিবার নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উচ্চ আদালতের বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অনুষ্ঠানে ১০ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিচারব্যবস্থা  ভেঙে পড়বে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। সাধারণ মানুষের কাছে এ আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল তাতে পরিবর্তন ঘটেছে। এর আগে একজন প্রধান বিচারপতিকে এই আদালতে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় অবক্ষয়ের কিছু নমুনা তুলে ধরেছিলাম। তখন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তদন্তের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তদন্ত অনেকটা অগ্রসরও হয়েছিল। ওনার পরে আবার নতুন প্রধান বিচারপতি এলে তার দফতর থেকে সেই ফাইলটি নিখোঁজ হয়ে গেছে।’ ওই বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দুর্নীতি ও পেশাগত অসদাচরণের চিত্র তুলে ধরেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে কয়েকটি বিশেষ কোর্টে বিশেষ বিশেষ আইনজীবীর সুবিধা পাওয়ার বিষয়টিও নতুন প্রধান বিচারপতিকে জানান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ বিশেষ কোর্ট বিশেষ বিশেষ আইনজীবীর কোর্ট হয়ে গেছে। বিচারপ্রার্থীরাও জেনে গেছেন, কোন কোর্টে কাকে নিয়ে গেলে মামলা জেতা যাবে। এটা তো ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আদালতের জাল-জালিয়াতি ও বিচারকদের কর্তব্যে অহবেলার চিত্রও উঠে আসে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যে।’ সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, উপযুক্ত ব্যক্তিই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন বিচারাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সমস্যাগুলো সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল আছেন। তার দিকনির্দেশনা ও দৃঢ় পদক্ষেপ সমস্যা নিরসনে সহায়ক হবে বলে মনে করেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ বহু আগে থেকেই উঠে আসছে। এ জন্য অনেক সময় আইনজীবীরাও দায়ী থাকেন। তিনি বলেন, আইন পেশাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের। কারও ওপর দোষ না চাপিয়ে প্রত্যেকে নিজেদের শুধরে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমরা যাকে পেয়েছি, তিনি অত্যন্ত সৎ ও একনিষ্ঠ।’ বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা আমলে নিয়ে নতুন প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগকে এই অপবাদ থেকে মুক্তি দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল অনেক অভিযোগই তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্যে আদালতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা উঠে এসেছে। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। এভাবে প্রকাশ্যে এসব অভিযোগ তুলে না ধরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারতেন। বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বর্তমান প্রধান বিচারপতি অনেক বিচক্ষণ। তিনি দীর্ঘদিন হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগগুলো উপস্থাপিত হয়েছে, প্রধান বিচারপতি এসব সমস্যার সমাধান করবেন বলেই প্রত্যাশা করি।’

অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল যেসব বিষয় উপস্থাপন করেছেন, বিচারপ্রার্থীদের পাশাপাশি আইনজীবীরাও এখানে ভুক্তভোগী। এ সমস্যাগুলো অনেক আগের। তবে কখনো রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার মুখ থেকে তা উপস্থাপিত হয়নি। তিনি আরও আগে ভূমিকা নিলে হয়তো সমস্যা কমে যেত।

মনজিল মোরসেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ও বিচারাঙ্গন সম্পর্কে মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে আদালত অঙ্গনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বারের সদস্যদের নিয়ে কমিটি করে কোথায় কোথায় দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা হচ্ছে সেটা চিহ্নিত করা যায়। বিচারাঙ্গনের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করেন এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর