সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঘোষণা দিয়েই প্রশ্ন ফাঁস করে ওরা

চক্রের ১৫ জন গ্রেফতার জানাল অভিনব নানা কৌশলের কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘোষণা দিয়েই প্রশ্ন ফাঁস করে ওরা

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটকদের কয়েকজন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘোষণা দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন— রাহাত ইসলাম, সালাহউদ্দিন, সুজন, জাহিদ হোসেন, সুফল রায় ওরফে শাওন, আল আমিন, সাইদুল ইসলাম, আবির ইসলাম নোমান, আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, শাহাদাত হোসেন ওরফে স্বপন, ফাহিম ইসলাম, তাহসিব রহমান ও আনিছুর রহমান। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদর দফতর, র‌্যাব, ডিএমপি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ও র‌্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহূত বিভিন্ন ডিভাইস, ২৩টি মোবাইল সেট ও ২ লাখ দুই হাজার ৪০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ ও আহসান উল্লাহ তিন ভাই। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম এই ‘উল্লাহ বাহিনী’। তারা ঢাকার ইন্দিরা রোডের একটি বাসায় থাকতেন। গ্রেফতার ১৫ জনের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, এসএসসি-২০১৮ পরীক্ষা শুরুর আগে ফেসবুকে একটি চক্র চ্যালেঞ্জ করে- তারা এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেই এবং কেউ তাদের ধরতে পারবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষা শুরুর কিছুদিন আগে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ পেজ ওপেন করতেন। এসব গ্রুপে একাধিক শিক্ষার্থীকে অ্যাড করতেন। পরে বিভিন্ন ফেক প্রশ্নপত্রের সেট ছেড়ে পরীক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। পরে বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে ৫০০-২০০০ টাকায় বিক্রি করতেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় এটা ঠিক। তবে এটা হয় পরীক্ষা শুরুর ঠিক ১৫-৩০ মিনিট আগে। কারণ প্রশ্নপত্রের সিলগালা করা প্যাকেটটি খোলা হয় পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে। কেন্দ্রে প্যাকেট নেওয়ার পথে কুচক্রের কোনো কোনো সদস্য গোপনে মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন সেটের স্ক্রিন শট নেয়। এরপর তা ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তবে এতে শিক্ষার্থীরা কোনো লাভবান হন না। কারণ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে বসে যান এবং তাদের কাছে কোনো মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস না থাকায় বাইরে থেকে তাদের কাছে এই প্রশ্নপত্র ও উত্তর পৌঁছানো সম্ভব নয়।’

বিভিন্ন স্থানে আরও আটক : প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গতকাল ময়মনসিংহে ৩ পরীক্ষার্থীসহ ৮ জন, নওগাঁয় শিক্ষকসহ ৭ জন, বগুড়ায় কেজি স্কুলের পরিচালক-কলেজ ছাত্রসহ ৪ জন এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

পরীক্ষার আগে দুই ঘণ্টা ‘ধীর গতিতে’ থাকবে ইন্টারনেট : চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে থেকে মোট আড়াই ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে ধীর গতি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে গতকাল দেশের সব আইআইজিকে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর (সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত) ইন্টারনেট ধীর গতিতে চলবে। এর আগে গতকাল রাতে ইন্টারনেটে ধীর গতি রাখার মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩০০ মোবাইল ফোন নম্বর ‘ব্লকড’ : প্রশ্নফাঁসে ব্যবহূত ৩০০ মোবাইল ফোন নম্বর চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এসব মোবাইল নম্বরের মালিকদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানেও নেমেছে। গতকাল প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর এ তথ্য জানিয়েছেন।

সচিবালয়ে এই কমিটির প্রথম সভা শেষে সচিব বলেন, এ পর্যন্ত ৩০০ টেলিফোন নম্বর চিহ্নিত করে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এরা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ে। এদের অভিভাবকরাও আছে। যে ৩০০ মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মালিককে ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও গ্রেফতার করা হবে। শুধু গ্রেফতার নয়, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, টেলিফোন নম্বর যাদের পাওয়া যাবে সে অভিভাবক হোক, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক হোক, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষা আইন এবং সাইবার অপরাধের আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনও হতে পারে তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে সেখান থেকে তারা বহিষ্কার হবে।

রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেটে ধীর গতি এনে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আমিন স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় আইআইজিগুলোকে এএনএস অপারেটরগুলোর ইন্টারনেটের ডাউনলোড (ডাউনস্ট্রিম) গতি ২৫ কেবিপিএস (কিলোবিট পার সেকেন্ড) সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা মোবাইল ইন্টারনেট, আইএসপি ও ওয়াইম্যাক্সসহ সব ধরনের ইন্টারনেট সেবায় কার্যকর হবে। নির্দেশনায় এসএসসি ও সমমানের পরবর্তী পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠানের প্রতিটি দিনে (১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে ২৫  কেবিপিএসে রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্তও ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গতিতে ইন্টারনেট চালু রাখা আর বন্ধ রাখা প্রায় একই কথা। এ গতিতে কিছু ডাউনলোড করা দূরে থাকুক, ইন্টারনেট ব্যবহার করাই কঠিন হবে।

সর্বশেষ খবর