সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সেই এমপির কাণ্ড!

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

সেই বিতর্কিত এমপি মোতাহার হোসেন থেমে নেই। নানা কাণ্ডের হোতা তিনি। সম্পাদক-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করেও তিনি ক্ষান্ত হননি। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের দিয়েও এ কাজটি করাচ্ছেন। এবার বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক, প্রকাশক ও দুই সিনিয়র রিপোর্টারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছেন লালমনিরহাটের বিতর্কিত এমপি মোতাহার হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ও সারোয়ার হায়াৎ খান। গতকাল তারা বাদী হয়ে লালমনিরহাট আমলি-৪ আদালতে এ মামলা দুটি দায়ের করেন। যার নং সিআর-২৪/২০১৮ ও সিআর-২৫/২০১৮। মোতাহারের মনরক্ষা ও তাদের নানা অপকর্ম ঢাকতেই ভিত্তিহীন অভিযোগে সম্পূর্ণ আক্রোশের বশবতী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে বলে মনে করছেন জেলার রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, মামলার বাদী হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হায়াৎ খান এমপি মোতাহার হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট। এ ছাড়া মোতাহার হোসেনের টাকায় লিয়াকত হোসেন বাচ্চু বিগত উপজেলা নির্বাচন করেছেন বলে তার নির্বাচনী আয়ের উেস উল্লেখ রয়েছে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনী ঋণ শোধ করতে মোতাহারের পক্ষ হয়ে মামলা করেছেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান।

 

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ থেকে অনিয়মে জড়িতের অভিযোগে বাদ পড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের অপকর্মের বিষয়ে গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় ‘লালমনিরহাটে মোতাহার সাম্রাজ্য’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রতিবেদনে উঠে আসে এমপি মোতাহার, তার পরিবার ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নানা অপকাহিনী। এ প্রতিবেদনের জন্য জেলার সর্বস্তরের মানুষ ও সুশীল সমাজ বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ও প্রতিবেদকদ্বয়কে অভিনন্দন জানালেও ক্ষুব্ধ হন এমপি মোতাহার, তার পরিবারের লোকজন ও মোতাহারের রাজনৈতিক সহচররা। এর পরে ২৮ জানুয়ারি মোতাহার হোসেন নিজে বাদী হয়ে সম্পাদক, প্রকাশকসহ দুই সিনিয়র রিপোর্টারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। আর গতকালও একই প্রতিবেদনের জন্য তার দুই সহযোগী পৃথক দুটি মানহানি মামলা দায়ের করেন। এতে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী, সিনিয়র রিপোর্টার সাঈদুর রহমান রিমন ও গোলাম রাব্বানীকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে বাদীপক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. আফাজ উদ্দিন তা আমলে নিয়ে বিবাদীদের আগামী ৫ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের তিন সপ্তাহ পর এমপি মোতাহারের এই দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মামলা করার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, এমপি মোতাহার ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই দেশের স্বনামধন্য সম্পাদক নঈম নিজামকে ঘায়েল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। যা স্বাধীন গণমাধ্যমের মত প্রকাশের অন্তরায়। এর আগেও ২০১৪ সালে রিপোর্ট প্রকাশের জেরে লালমনিরহাট-১ আসনের এই এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামসহ তিনজনের নামে একটি মানহানি মামলা দায়ের করেছেন। যে মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান।

নিন্দার ঝড় : বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘লালমনিরহাটে মোতাহার সাম্রাজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মোতাহার, তার পরিবার ও মোতাহারের আশীর্বাদপুষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকাহিনী বেরিয়ে আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক, প্রকাশক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোতাহারের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ও সারোয়ার হায়াৎ খান গতকাল পৃথক দুটি মামলা করায় জেলাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। জেলার সুশীল সমাজ, সাংবাদিক সমাজ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ প্রতিদিনের কণ্ঠরোধ করতেই এমন সাজানো মামলা দেওয়া হচ্ছে, যা স্বাধীন মত প্রকাশের অন্তরায়। জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, মামলা দিয়ে নিজেদের অন্যায় ও অপকর্ম ঢাকা যাবে না। তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমপি মোতাহার ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নানা অপকর্ম খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। এক বিবৃতিতে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মমিনুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন লিমন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহাবুবুল আলম মিঠু, দৈনিক লাল প্রভাতের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী ভোলা, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার ও মানবাধিকার কর্মী হাসান-উল-আজিজ, সাপ্তাহিক নতুন বাংলার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান রাজু, সিনিয়র সাংবাদিক আলতাফুর রহমান আলতাফ, এশিয়ান টিভির মেহেদী হাসান জুয়েল, সাংবাদিক রাইসুল ইসলাম সেনা, সাংবাদিক আবদুল হান্নান, সাংবাদিক সাহানুর রহমান, সাংবাদিক আমিনুর রহমান, রুবেল হোসেন, বাবলু মিয়া, ব্যবসায়ী নেতা গোলাম ফারুক ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ওই মামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ও সিনিয়র দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কখনো নিজেদের অপকর্ম ঢাকা যাবে না। তাছাড়া সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একজন সাংবাদিক যখন রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ করেন তখনই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। এর পরই তারা নানাভাবে হেয় করার জন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা ও হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন; যা মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য এক প্রকার হুমকি। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম দেশের সাংবাদিকদের জন্য শেষ আশ্রয়স্থল। তিনি সব সময় নির্যাতিত ও নিপীড়িত সাংবাদিকের পক্ষে লড়াই ও সংগ্রাম করে থাকেন। তাই তার কণ্ঠ রোধ করতেই রাঘববোয়ালরা উঠেপড়ে লেগেছে, যা কোনো দিনও বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। বিবৃতিতে অবিলম্বে এই হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর