শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঠিক হয়নি রোহিঙ্গা ফেরতের দিনক্ষণ

ঢাকায় দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, ফেরতের জন্য ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা হস্তান্তর ১০ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরতের আশ্বাস : আসাদুজ্জামান খান কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

 ঠিক হয়নি রোহিঙ্গা ফেরতের দিনক্ষণ

রাজধানীতে গতকাল বৈঠকের আগে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিয়াওকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল —এএফপি

প্রত্যাবর্তনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা ১০ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে পর্যায়ক্রমে ফেরত নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার। গতকাল বিকালে ঢাকা সফররত মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সুইকফির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বেলা ৩টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে  রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষের ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের ১৮ জন ও মিয়ানমার প্রতিনিধি দলে ১৫ জন সদস্য অংশ নেন। দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টার বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, প্রত্যাবর্তনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে আজ (শুক্রবার) এক হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। তারা জানিয়েছেন, তালিকাটি যাচাই-বাছাই করে তারা দেখবেন। তাদের নাগরিক হলে ফেরত নেবেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারাও আন্তরিক ছিলেন। আমরা ১১ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গার তালিকা তৈরি করেছি, সেখানে তারা (মিয়ানমার) বলেছিলেন, পরিবার অনুযায়ী তালিকা দিতে। আমরা আজ এক হাজার ৬৭৩টি পরিবারের আট হাজার ৩২ জনের তালিকা করে তাদের দিয়েছি। তারা এটি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তারা (মিয়ানমার) এটা (তালিকা) যাচাই-বাছাই করে আমাদের জানাবেন। এরপর শুরু হবে প্রত্যাবর্তনের পালা।’ মন্ত্রী জানান, ‘প্রথম ধাপে দুই দেশের শূন্যরেখায় যে ছয় থেকে সাত হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন আমরা তাদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। মিয়ানমারও এ বিষয়ে একমত। এ জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় মিয়ানমারের একটি জেলায় দুই দেশের আলোচনা হবে। সেখানে আমাদের চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। মিয়ানমার সেখানে জানাবে এদের কীভাবে তারা ফেরত নেবে।’ বৈঠকে অভিবাসী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচটি সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘অভিবাসীদের দেশে নিয়ে পুনর্বাসন, তাদের জন্য প্রাথমিকভাবে বাড়িঘর নির্মাণ এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। মিয়ানমারও আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। বৈঠকে বিরাটসংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা আমাদের অসুবিধার কথা বলেছি। তারাও তাদের অসুবিধার দিকটি বলেছে। এখনো প্রতিদিন ৫০ থেকে ১৫০ জন করে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে মাদক ও ইয়াবামুক্ত রাখার জন্যও আমাদের বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ইয়াবা আসা বন্ধ করার লক্ষ্যে ৪৯টি কারখানা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার। এর আগে বেলা পৌনে ৩টায় মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি দলের সালাম গ্রহণ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর