শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সংবিধান লঙ্ঘন : আদালত

প্রতিদিন ডেস্ক

ছয়টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের বিরুদ্ধে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ফের আইনি হোঁচট খেল। এবার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রিচমন্ডভিত্তিক চতুর্থ ফেডারেল সার্কিট আদালত বৃহস্পতিবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রুলিং দিয়েছে। আদালতের রুলিংয়ে বলা হয়, ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ। আর এতে মার্কিন সংবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে। রুলিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে ৯-৪টি ভোট পড়ে। এর আগে সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক নবম ফেডারেল সার্কিট আদালত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রুলিং দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে গতকাল এ কথা বলা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে গত সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশের সংখ্যা কমিয়ে ছয়টি করা হয়। ওই দেশগুলো হচ্ছে— শাদ, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেন। প্রথম তালিকায় অবশ্য ইরাককেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরে বাগদাদের জোরালো লবিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ তালিকা থেকে দেশটির নাম বাদ দেওয়া হয়। ইসলামী সন্ত্রাসবাদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখতেই ওই দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার দরকার রয়েছে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে তখন বলা হয়েছিল। মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যই ট্রাম্পের মুসলিম অভিবাসনবিরোধী নীতির ভিত্তি। আর ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বর্ণিত ভাষা-ই এর প্রমাণ বলে জানিয়েছেন ভার্জিনিয়ার ফেডারেল আপিল আদালতের প্রধান বিচারক রজার গ্রেগরি। রুলিংয়ে বিচারক গ্রেগরি বলেন, ‘ওই নির্বাহী আদেশের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অন্যান্য নির্বাহী শাখার পক্ষ থেকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, ইসলামের বিরুদ্ধে বৈরিতা দেখিয়ে ওই নির্বাহী আদেশকে অসাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’ এর আগে সানফ্রান্সিসকোর নবম ফেডারেল সার্কিট আদালত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যে রুলিং দিয়েছিল তাতে সংবিধান লঙ্ঘনের ব্যাপারটি উল্লেখ করা হয়নি। পরিবর্তে এতে বলা হয়েছিল, ওই আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় অভিবাসন আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের নির্দেশ দিলেও তা চ্যালেঞ্জ করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ভার্জিনিয়ার ফেডারেল আদালেতর ওই রুলিং। এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বৈধতা নির্ধারণে তারা উভয় ইস্যুই (ভার্জিনিয়া ও সানফ্রান্সিসকোর আপিল আদালতের রুলিং) বিবেচনায় নেবে। আগামী এপ্রিলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ওপর শুনানি শুরুর কথা রয়েছে। শুনানিতে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জুনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক রুলিং দেওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ভার্জিনিয়ার আদালতের রুলিংয়ের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন বিচার বিভাগের মুখপাত্র কেরি কুপেক জানিয়েছেন, ‘ওই রুলিং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বিদ্যমান অবস্থায় (স্ট্যাটাস কুয়ো) কোনো প্রভাব ফেলবে না। ওই দুটি ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত মতামতের অপেক্ষায় আছি আমরা।’ মুখপাত্র কুপেক আরও বলেন, ‘সব আমেরিকানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার চেয়ে অন্য কোনো কিছুই প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) ও অ্যাটর্নি জেনারেলের (জেফ সেশন্স) কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ নয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য (ইসলামী সন্ত্রাসবাদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখা) অর্জনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বৈধ আদেশই এখনো তাৎপর্যপূর্ণ রয়েছে।’ এনডিটিভি।

সর্বশেষ খবর