বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : জাবেদ পাটোয়ারী আইজিপি

পুলিশ হবে গণমুখী বাহিনী

আনিস রহমান ও সাখাওয়াত কাওসার

পুলিশ হবে গণমুখী বাহিনী

‘একজন অসুস্থ রোগী চিকিৎসকের কাছে যাওয়ামাত্রই তিনি যদি অনেকগুলো টেস্টের লম্বা একটা ফর্দ ধরিয়ে দেন, তখন রোগীর মনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। আবার ওই চিকিৎসকই যদি রোগীকে দেখার পর বলেন, ধুর্ ভাই... কিচ্ছু হয়নি আপনার। দু-একটি ওষুধ লিখে দিয়ে যদি বলেন, সব ঠিক আছে। তখন দেখা যাবে ওই রোগীর অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে গেছে। অনেকটা একই অবস্থা সমস্যাগ্রস্ত একজন ব্যক্তির। মানুষ সমস্যায় পড়লে সৃষ্টিকর্তার পরই পুলিশের সাহায্য চায়। ওই ব্যক্তি যদি থানায় গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে একটু ভালো আচরণ পান এবং তিনি যদি আশ্বস্ত হন যে পুলিশ তার কথা শুনছেন ও চেষ্টা করছেন সমস্যাটি সমাধান করার, তখন দেখা যাবে ওই ব্যক্তির ৭০ শতাংশ কষ্টই দূর হয়ে গেছে। এসব বিষয়ই আমি আমার অফিসারদের বলে যাচ্ছি।’ সোমবার নিজ দফতরে বাংলাদেশ      প্রতিদিনের কাছে ঠিক এভাবেই খোলামেলা কথা বলেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বলেছেন পুলিশ বাহিনীকে গণমুখী বাহিনী হিসেবে রূপ দেওয়ার জন্য তার স্বপ্নের কথা। ষষ্ঠ বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী সুদর্শন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। দীর্ঘদিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন পুলিশপ্রধান হিসেবে। এর আগে নিজ উদ্যোগ ও চেষ্টায় বিভিন্ন নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিসহ সব বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে স্পেশাল ব্রাঞ্চকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে স্পেশাল ব্রাঞ্চের দেওয়া আগাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে দেশ অনেক বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই কর্মকর্তা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)’-এ ভূষিত হন। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওপরের কথাগুলো বলেন নবনিযুক্ত আইজিপি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কর্মকর্তাদের বলছি, আমাদের যানবাহন ও আবাসনসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে এটা সত্য। তবে একটা মানুষের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে, তার সমস্যার কথাগুলো শুনতে তো গাড়ি কিংবা বাড়ি লাগে না।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষ পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না এর প্রকৃত তথ্য জানতে সদর দফতর থেকে কোনো মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে কি না?

আইজিপি : আসলে এ বিষয়টি আগে মন থেকে আসতে হবে। এ জন্য আমি আমার লোকদের মোটিভেট করার উদ্যোগ নিচ্ছি। তাদের কাজ, অর্থাৎ দায়িত্বের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কাজটি আমি আদায় করিয়ে নিতে চাইছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মাদক নির্মূলে আপনি বিশেষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন কি না?

আইজিপি : মাদকের চাহিদা যেন তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ জন্য সামাজিকভাবে এ উদ্যোগ নিতে হবে। ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচের’ মাধ্যমে মাদক নির্মূলে কাজ করতে হবে। দেশে মাদকের চাহিদা বন্ধ করতে না পারলে কোনো না কোনোভাবে জোগান আসবেই। যারা এরই মধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে গেছেন, তাদের কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে মাদক নির্মূলে পুলিশের একক দায়িত্ব হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না। মাদক নির্মূলে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সম্প্রতি নিয়োগ, পদোন্নতি, ঘুষ-বাণিজ্য নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণে আপনার কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি? শুনেছি এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে পুলিশ সদর দফতর থেকে আপনার নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন কি?

আইজিপি : স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে আমরা কিছু কাজ করছি। নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার পুলিশ সুপারকে সহায়তার জন্য আমরা একটি করে টিম পাঠাচ্ছি। জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী করতে আমি আমার কর্মকর্তাদের মোটিভেশনের কাজটি করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জঙ্গিবাদ নিয়ে পুলিশের অবস্থান কী?

আইজিপি : সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ এখন জঙ্গিবাদ নির্মূলে রোল মডেল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মাথাচাড়া দেওয়া জঙ্গিবাদকে নির্মূল করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা কীভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ রুখে দিয়েছি তা জানতে চায় বিভিন্ন দেশ। তারা এখন আমাদের কাছ থেকে শিখতে চায়। জঙ্গি-সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের সব ধরনের সক্ষমতা ও যোগ্যতা রয়েছে। সবার সহযোগিতায় এসব সাফল্য বাংলাদেশ পুলিশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আগামী নির্বাচন নিয়ে পুলিশের প্রস্তুতি কেমন?

আইজিপি : ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ রুখতে ১৭ জন পুলিশ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। জীবন দিয়ে পুলিশ জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসবাদ রুখে দিয়েছে। নির্বাচনের তো অনেক সময় বাকি। এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার অনেক সময় রয়েছে। তবে জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে পুলিশ তার কাজটিই করে যাবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে ধন্যবাদ।

আইজিপি : বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর