বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেড় কোটি নাগরিক বিতাড়নের প্রস্তুতি আসামে

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারতের আসাম রাজ্যের বৈধ নাগরিক তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদের রাজ্য থেকে বিতাড়নের প্রস্তুতি চলছে। ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা এ তথ্য দিয়ে জানায়, ২০১৮ সালের নতুন বর্ষের প্রথম প্রহরে আসাম রাজ্য সরকারের প্রকাশিত ‘বৈধ’ নাগরিকের তালিকায় এক কোটি ৯০ লাখ নাম ছিল। ওই তালিকায় এক কোটি ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়ে। আর এ তালিকা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হানিফ খান নামে এক ট্যাক্সিচালকের লাশ পায় পুলিশ। কাছাড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন হানিফ। তার স্ত্রী রুশকার দাবি, ‘আমি নিশ্চিত, তালিকায় নিজের নাম না থাকায় ও আত্মহত্যা করেছেন।’ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা দুই বছর ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল ভারতীয় মা ও আফগান বাবার সন্তান হানিফকে। দুই বছর আগে, আসাম সরকার ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পূর্ববর্তী সময় থেকে এ রাজ্যে বসবাসকারী হিসেবে যারা নিজেদের শিকড় প্রমাণ করতে পারবে, তাদের চিহ্নিত করে অন্য অধিবাসীদের বিতাড়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিল। ইদানীং বলাবলি হচ্ছে যে, ভারতজুড়েই লাখো মানুষের তালিকা করা হচ্ছে ‘রাষ্ট্রবিহীন’ পরিচয়ে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করছে, দেশটিতে প্রায় দেড় কোটি বাঙালি বা বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে কর্মরত আছেন। বের করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত তথাকথিত বিদেশিদের জন্য আসামে আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা ছয়টি কেন্দ্রে ইতিমধ্যে কমপক্ষে দুই হাজার লোককে আটক রাখা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকেই আসামে ‘বিদেশি খেদাও’ আন্দোলন চলছে। তারই জেরে কয়েকটি মুসলিম-অধ্যুষিত গ্রামে শুধু এক দিনে একযোগে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এবং টানা সাত ঘণ্টায় কমপক্ষে এক হাজার ৮০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। নির্যাতিতদের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী আমান ওয়াদুদ বলছেন, ‘বিদেশি বলে আখ্যায়িত করে এদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে— যেন এরা ভিনগ্রহের মানুষ।’ ‘বিদেশি’ বলে অভিযোগে আচমকা গ্রেফতার হওয়া এবং ডিটেনশন ক্যাম্পে পচে মরার আশঙ্কায় আসামের অধিবাসী বাঙালি মুসলিমরা নিদারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আগামী ৩১ মে সরকারিভাবে ‘বিদেশি’দের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তখন বহিষ্কারের হুমকিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়বে। এদের নিয়ে আসাম সরকারের পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেছেন, ‘ওরা সাংবিধানিক অধিকার হারাবে; একটিমাত্র অধিকার ওদের থাকবে— জাতিসংঘ স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার— অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়।

সর্বশেষ খবর