বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সৌদিতে সেনাপ্রধানসহ ব্যাপক বরখাস্ত

প্রতিদিন ডেস্ক

সৌদি আরবের সেনাপ্রধান আবদুল রহমান বিন সালেহ আল বানিয়ানকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। একই সঙ্গে বিমান বাহিনী প্রধানসহ আরও অনেক পদে পরিবর্তন এনেছেন। কারও চাকরি গেছে। কাউকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। আর কোনো কোনো পদে অপেক্ষাকৃত তরুণদের আনা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে বাদশাহ সালমান ডিক্রি জারি করে সশস্ত্র বাহিনীতে এই ব্যাপক রদবদল এনেছেন। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের লড়াইয়ের তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগে আগে বড় এই পরিবর্তন আনা হলো। আদেশে নতুন কয়েকজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি নিউজ এজেন্সিতে এসব খবর জানানো হলেও সামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। নতুন সেনাপ্রধান করা হয়েছে ফায়াদ আল রুয়ালিকে। তাকে মূলত লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে জেনারেল করে এই পদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারজন মেজর জেনারেলকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে বসানো হয়েছে নতুন দায়িত্বে। দেশটির ১৩টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে আল-জউফ, আসির ও হাইল অঞ্চলের আমির ও উপ-আমির পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। রিয়াদ ও মক্কার মেয়র পদেও এসেছে নতুন মুখ। এ ছাড়া শ্রম ও সমাজ উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক নারীকে উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নাম তামাদার বিনতে ইউসুফ আল রামাহ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আসির প্রদেশে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রিন্স তুর্কি বিন তালালকে। প্রিন্স তুর্কি বিন তালালের ভাই বিলিয়নিয়ার প্রিন্স আলওয়ালেদ বিন তালালকে কিছুদিন আগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে গ্রেফতারের  দুই মাস পর মুক্ত হন তিনি।

রদবদলের নেপথ্যে : সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে প্রায় তিন বছর ধরে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি সেখানে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে সৌদি জোট। এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিল সৌদি আরব।

আর বিবিসি লিখেছে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তার পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। সৌদি যুবরাজ দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীরও দায়িত্বে রয়েছেন। গত বছর যুবরাজের নেতৃত্বেই সৌদি আরবে ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযান’ চালানো হয়। ওই অভিযানে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রিন্স আর ধনকুবেরকে রিয়াদের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আটকে রাখা হয়। তাদের কাউকে কাউকে পরে মোটা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে শীর্ষ সামরিক পদগুলোর রদবদলকে আন্তর্জাতিকভাবে নতুন লক্ষ্য অর্জনের কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, এই রদবদল বাদশাহ-পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানের পশ্চিমা উদারবাদী সংস্কারে ধাবিত হওয়ার প্রচেষ্টারই অংশবিশেষ। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে পছন্দের মানুষ নিয়োগ দেওয়াকে কেউ কেউ আবার কেবল যুবরাজের ক্ষমতা সুসংহত করার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন।

এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের এস রাজা রত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক জেমস ডোরসেই বলেন, সৌদি যুবরাজই দেশ চালাচ্ছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যুবরাজ সৌদি আরব সরকারের কাঠামো পরিবর্তন করেছেন। আগে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখন সেখানে একজনের শাসন চলছে। তিনি আরও বলেন, সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই সামনের দিনে আরও পরিবর্তন দেখতে পাব। কারণ যুবরাজ সবখানে নিজের লোক নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সৌদি আরবের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছেন। বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স।

সর্বশেষ খবর