শিরোনাম
বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রভাবশালীরা বড় দুর্নীতিবাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রভাবশালীরা বড় দুর্নীতিবাজ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, প্রভাবশালীরাই দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ। এরা নিজেদের স্বার্থে আর্থিক অনিয়মসহ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হয় দেশের প্রকৌশল বিভাগগুলোতে। শুধু অর্থ ব্যয় নয়, কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার দায়িত্বও প্রকৌশলীদের। দেশের সাধারণ মানুষ দুর্নীতি চায় না। এসব কারণে প্রভাবশালী কিংবা তদবিরবাজদের প্ররোচনায় কেউ অনৈতিক কাজ করবেন না। তিনি গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রকৌশল দফতরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, মহাপরিচালক মো. জাফর ইকবাল, রাজউক চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী মো. মঈদুল ইসলাম, সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুভেন্দু বিকাশ গোস্বামী, প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসের, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মফিজ্জল হক, হাইটেক পার্ক অথরিটির এমডি হোসনে আরা বেগম, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া প্রমুখ। মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের বড় বড় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রকৌশল সংস্থাগুলো বাজেটের ৮০ অর্থ ভাগ ব্যয় করে। এ ব্যয় হতে হবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত। আর্থিক বিষয়ে অডিট করা হয়, কিন্তু কাজের অডিট করা হয় না। আমরা কাজ করি, কিন্তু কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করি না। আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি, কিন্তু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যথাযথভাবে যাচাই করি না। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘দুদকে প্রকৌশল সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগ আসে। আমরা এগুলো বিশ্বাস করতে চাই না। আপনাদের কথা শুনতে চাই আমরা। এটি হতে পারে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের একটি প্রক্রিয়া। সবাই যদি আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে না আসেন, তাহলে দেশ এগোবে না। মানুষও আমাদের বিশ্বাস করবে না।’ ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘প্রকল্পের নামে নিশান পেট্রল বা প্রাডো গাড়ি আমদানি করি কেন? কেন প্রগতি থেকে গাড়ি কিনি না? প্রকল্প শেষে গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করেন? কোথায় যায়?’ রাজউক চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, রাজউকের সব প্রকল্পের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে। অনিয়ম প্রতিরোধে মনিটর করা হচ্ছে। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্লট দিচ্ছেন। প্রকল্প গ্রহণের আগে উপকারভোগী জনগণের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে কনসালট্যান্ট রাখা হয় কিন্তু উপকারভোগী জনগণের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। এটা কেমন কথা। প্রকল্প গ্রহণ, এস্টিমেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন— প্রতিটি স্তরে উপকারভোগীদের সঙ্গে কনসালটেশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত।’ প্রকল্প নির্বাচন ও বাস্তবায়নে তদবির ও প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তদবিরবাজি ও অনৈতিক প্রভাবই সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। আপনারা পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করবেন। প্রভাব ও তদবিরকে আমলে নেবেন না। যদি কোনো প্রভাবশালী আপনাদের কাছে অনৈতিক কিছু দাবি করেন, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানাবেন। আপনাদের জন্য কমিশনের দ্বার সব সময় উন্মুক্ত। আপনারাই দেখেছেন, প্রভাবশালী ও প্রভাবহীন সবাইকে কীভাবে দুদক আইনের আওতায় এনেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে। আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন বিদ্যমান আইন, বিধিবিধান অনুসারে। কোনো প্রভাবশালীর চাপে অথবা অনৈতিক যোগসাজশে কোনো কাজ করলে এর দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। কোনটি ভুল আর কোনটি ইচ্ছাকৃত অনৈতিক কাজ, এটা কমিশন অনুধাবন করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইলেকট্রনিক টেন্ডার করি, আবার এস্টিমেটর গোপনীয় তথ্য বিশেষ ব্যক্তিকে জানিয়ে দিই। এ অবস্থা চলতে পারে না। দেশকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হলে পদ্ধতিগত উন্নয়ন করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে কমিশনের অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে কারও মুখের দিকে তাকায় না, গাণিতিক পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। বিভিন্ন দফতরের প্রকৌশলীরা খোলামেলা বক্তব্যে ভূমি অধিগ্রহণ, এস্টিমেশনের তথ্য ফাঁস, রেট অব শিডিউল, প্রভাব ও তদবিরের বিষয়গুলো কমিশনকে অবহিত করেন।

সর্বশেষ খবর