বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে রাজনীতি করি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা প্রমাণ করেছি ও বার বার অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছি যে, দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তেই রাজনীতি করি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইচ্ছা থাকলে একটি সরকার দেশের উন্নয়ন করতে পারে আমরা তা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। আগামী মার্চেই বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। নিম্ন বা মধ্য নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবই। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এ সময় স্পিকার জানান, ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধী দলের ২৩৬ জন সংসদ সদস্য ৬৪ ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন সংসদে যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হতো, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অত্যন্ত গঠনমূলক সমালোচনা করছে। গণতান্ত্রিক চর্চাটা কীভাবে হতে পারে তা এই সংসদে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই, অশান্তি চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের আক্রমণ করলে তা যাতে মোকাবিলা করতে পারি সেজন্য সশস্ত্র বাহিনীকে ত্রিমাত্রিকভাবে গড়ে তুলেছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমমর্যাদা নিয়ে চলতে চাই। জিয়া-এরশাদ-খালেদা কেউই স্থলসীমানার সমাধান করতে পারেননি, আমরাই করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তিনি বলেন, আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, আমরা করেছি। রায়ও কার্যকর করেছি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছি। কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তার দাবিদাররা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদকের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমরা কঠিন হাতে জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছি। দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাই, সবাই যেন তাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কী করে, মাদকাসক্তে আসক্তি হচ্ছে কিনা, তা যেন দেখেন। সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন। সন্তানরা যেন বাবা-মায়ের কাছে মন খুলে কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ গড়ে তুলুন। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সমর্থন করে না। রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি। যত দিন তারা নিজ মাটিতে ফিরে না যায় তত দিন যাতে একটু ভালোভাবে থাকে সেই ব্যবস্থা করেছি। ১০ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গাকে আইডি কার্ড করে দিয়েছি, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আচরণ মিয়ানমার করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে, বিনিয়োগের কোনো অভাব নেই। বিনিয়োগ যাতে দ্রুত হয়, সেজন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করেছি। কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ১০০ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ইচ্ছা থাকলে যে একটি দেশের উন্নয়ন করা যায়, তা আমরা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ এটা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এটা আমরা করেছি। অগ্রগতির উন্নয়নসূচকে বিশ্বের পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে সারা বিশ্বে ৩২তম স্থানে রয়েছে। সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার কারণেই প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বিএনপি আমলে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। আজকে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে। এ হার ১৪-১৫-এর মধ্যে যাতে নামতে পারে সে উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট থেকে ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি।

অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। রপ্তানি আয় ৩৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। রিজার্ভ এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমরা দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছি। ৫ কোাটি মানুষ নিম্ন থেকে মধ্য আয়ে উন্নীত হয়েছে। গত নয় বছরে ৫২ লাখেরও বেশি মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ প্রভাইডারদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মাধ্যমে চলছে, তাই প্রকল্পে যারা কাজ করছেন তাদের জাতীয়করণ করা সম্ভব নয়। যারা থাকতে চান না তারা চলে যেতে পারেন, অন্য জায়গায় চাকরি নিয়ে যেতে পারেন। প্রকল্পটি চলছে, আগামীতেও চলবে। সেবা মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, এই নীতি আমরা অনুসরণ করেছি। সর্বত্র নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। পৃথিবীর কোনো দেশ একধাপে এত বেতন বৃদ্ধি করতে পারেনি। প্রতি বছর উৎসব ভাতাও দিচ্ছি। ৪৫ লাখ মানুষকে বয়স্কভাতা দিচ্ছি। অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিজড়া ও বেদেদের স্বীকৃতি দিচ্ছি, ভাতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঘরবাড়ি বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। টানা দুই মেয়াদে ধারাবাহিকভাবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণে ও তাদের উন্নয়নের জন্য। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই রাজনীতি করি, একটাই লক্ষ্য দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি দেওয়া। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে সরকারের অর্জনগুলো এবং দেশ যে সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে তা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। এজন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর