বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগে আগ্রহী এডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগে আগ্রহী এডিবি

তাকিহিকো নাকাও

ঢাকা সফররত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বৃহৎ প্রকল্পে বিনিয়োগে প্রস্তুত এডিবি। বিশেষ করে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আমরা এখানে বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। একক বৃহৎ প্রকল্প হিসেবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে এডিবি অবশ্যই তা বিবেচনা করবে।’ এ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ক্ষেত্রেও এডিবি সহায়তা করতে পারে বলে জানান নাকাও। গতকাল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে দ্রুতগতিতে। মানুষের গড় আয় বেড়েছে আরও দ্রুত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও রয়েছে ইতিবাচক পর্যায়ে। তবে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। এ জন্য সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আট বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এডিবির। এই অঙ্ক আগের পাঁচ বছরের (২০১১-২০১৫) চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। যদি প্রয়োজন হয়, এর বাইরেও বাংলাদেশকে আমরা অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা দেব। সেটা চলমান প্রকল্পেই নয়, এর বাইরে নতুন প্রকল্পেও হতে পারে। এমনকি সরকারের যে ১০টি মেগা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোতেও আমরা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছি।’ তাকিহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) বাড়াতে এডিবি অবকাঠামো খাতে, বিশেষ  করে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং নগর এলাকার উন্নয়নে ঋণ-সহায়তা অব্যাহত রাখবে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তাকিহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্যও এডিবি সহায়তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা কতটা সম্ভব— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা অসম্ভব নয়। তবে খুবই কঠিন। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ। দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগও প্রয়োজন।’ সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং মার্চে এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে বাংলাদেশ— এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে নাকাও বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বর্তমানে যে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ রয়েছে তা জাতীয় নির্বাচনের পরও টিকে থাকবে। আর এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়াবে। তবে এ জন্য এডিবির দেওয়া নমনীয় ঋণে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তা এখনই বলা যাবে না।’ তিন দিনের সফরে সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন এডিবি প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার তিনি ঢাকার বাইরে এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সেই দিন সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। গতকাল তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এডিবিও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সে সময় প্রাথমিক চুক্তি হলেও পরে নানা জটিলতায় সে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। এর জের ধরে এডিবিও পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদ্মার পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর